এলার্জি কি?
মানুষের শরীরে এক একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
বা ইমিউন সিস্টেম আছে। কোন কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে গণ্ডগোল দেখা দিলে এলার্জির বহির্প্রকাশ
ঘটে। কখনও কখনও আমাদের শরীর ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের
চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই
এলার্জি।
এলার্জি কেন হয়?
- ঘরের
জমানো ধুলো হাপানি জনিত এলার্জির জন্য একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলোতে মাইট নামক এক
ধরনের ক্ষুদ্র জীবানু থাকে যা শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টির
জন্য দায়ী। সে জন্যে যারা হাপানি জনিত এলার্জি সমস্যায় ভোগেন তারা ঘরের ধুলো সবসময়
এড়িয়ে চলতে হবে বিশেষ করে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময়। ঘরের কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ,
আপবাবপত্র প্রভৃতিতে যে ধুলো জমে, তা পরিস্কার করার সময়ও দুরে থাকতে হবে।
- দুষিত বাতাস, ঘরের ধুলো, ফুলের
পরাগ, ধোয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম, পুরানো ফাইলের ধুলো ইত্যাদি দেহে
এলার্জিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে হাপানি রোগের সৃষ্টি করতে পারে। হাপানির সঙ্গে
এলার্জির গভীর সংযোগ আছে তাই যারা হাপানিতে ভুগছেন তাদেরকে এগুলি পরিত্যাগ
করে চলতে হবে। আবার ছত্রাক দেহে এলার্জি তথা হাপানি সৃষ্টি করে। ছত্রাক একটি
অতি ক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ। কোন কোন খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দুষিত হয়ে থাকে। আবার
কোন কোন খাদ্য যেমন- পনির, পাউরুটি এবং কেক তৈরিতে ছত্রাক ব্যবহার হয়। এই
ছত্রাক এলার্জি তথা হাপানি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।
- ফোড়া, পাঁচড়া, মাথা ব্যথা, জ্বর,
শরীর ব্যথা ইত্যাদির জন্য পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন এই ওষুধ দুটো আমরা
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই খেয়ে থাকি। পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন থেকে শরীরে
এলার্জি জনিত চুলকানি হতে পারে এমনকি অতিরিক্ত পেনিসিলিন ব্যবহারের কারণে
মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা যাবে
না।
- খাদ্যে প্রচুর এলার্জির সম্ভাবনা
থাকে যেমন- দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে খুব বেশি এলার্জি হতে
পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে গায়ে চুলকানি, হাপানি ইত্যাদি হতে পারে।
এছাড়াও মাছ, বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, গম, ডিম, তরমুজ, পেয়াজ,
রসুন, চকোলেট এমনকি ঠান্ডা পানীয়ও কোন কোন ব্যক্তির এলার্জি সৃষ্টি করতে
পারে।
- শিশুকে টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়ার
পর অনেক সময় চুলকানি বা ঠান্ডাজনিত কোন সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ
নেয়া উচিত।
- মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা,
ভীমরুল প্রভৃতি পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া এমনকি হাপানি
পর্যন্তও হতে দেখা যায়। এছাড়াও শরীরে পশম বা পালক আছে এমন গৃহপালিত পশু যেমন-
বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি এবং গৃহপালিত পাখিও অনেক সময় এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া আর্টিকোরিয়া (আমবাত) নামক একটি চর্মরোগে ত্বকে চাকা চাকা হয়, ফুলে ওঠে
এবং চুলকানি হয়। অধিকাংশ মানুষের জীবনের কোন না কোন সময় এই রোগটি হয়ে থাকে।
এই আর্টিকোরিয়া শরীরের কোন নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে আবার সমস্ত
শরীরে ছড়িয়েও পড়তে পারে। এ ধরনের এলার্জিতে প্রচন্ড চুলকানির সাথে বিভিন্ন
আকারের লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে পারে। নানান কারন এটা হতে পারে যেমন-
খাদ্য এলার্জি থেকে (বাদাম, ডাল, মাংস, ডিম), পতঙ্গের কামড়ে (বোলতা, মৌমাছি,
ভীমরুল, মাকড়সা) ইত্যাদি কারনে এটা হতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক
চিকিৎসাঃ
অ্যালার্জির সূত্রপাতকে
ভয় পান না এমন দুর্ভাগ্যজনকর মধ্যে যদি আপনি না হয়ে থাকেন তবে অবাক লাগবে না। হোমিওপ্যাথি
স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয়ই অ্যালার্জির লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
হোমিওপ্যাথিক পেশাদারের সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদী অ্যালার্জি সর্বোত্তমভাবে সম্পন্ন হয়।
স্বল্পমেয়াদী অ্যালার্জির জন্য নীচে একটি প্রতিকার ব্যবহার করে দেখুন:
অ্যালিয়াম সিপা:
নাক থেকে জ্বলন্ত স্রাব, চোখ থেকে কোমল স্রাব, আলো চোখের ব্যথা করে, লারিক্সে চিকিৎসা
/ চিকিৎসা সংবেদন করে।
ইউফ্রেসিয়া: চোখের
ঘন, জ্বলন্ত স্রাব, নাক থেকে কোমল স্রাব, স্ফীত কাশির সাথে খুব ফোলা ফোলা, বাড়ির অভ্যন্তরে
খারাপ লাগে।
সাবাডিলা: হিংস্র
হাঁচি, চুলকানি নাক, লাল এবং ফোলা চোখের পাতা, স্রোতে চোখ, মাথাব্যাথা যেন মাথা সঙ্কুচিত
হয়ে যাচ্ছে, মরিচ, ব্যক্তির ভাবনা নিস্তেজ এবং ধীর।
নাক্স ভোমিকা: স্টার্নিসেস
এবং অবরুদ্ধ শ্বাস প্রশ্বাস, কানের ভিতরে চুলকানি, চোখ জ্বলতে থাকে এবং আলোর সংবেদনশীল
হয়, ব্যক্তি বিরক্তিকর হয়।
পালসেটিলা: নাক
এবং চোখ থেকে কোমল হলুদ স্রাব, কেঁদে বা অশ্রুযুক্ত স্বভাব, ব্যক্তিত্ব খোলা বাতাসে
ভাল অনুভব করে।
আর্সেনিকাম অ্যালবাম:
ফুসফুসে ঘা এবং ঘনত্ব, জ্বলন্ত গলা, ব্যক্তি অস্থির এবং উদ্বিগ্ন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন