চিকিৎসকের একমাত্র উদ্দেশ্য রুগ্ন ব্যক্তিকে পুনঃ স্বাস্থ্যে প্রতিষ্ঠিত করা।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে যেমন একটা উদ্দেশ্য থাকে তেমনিই একজন চিকিৎসকেরও রোগী
চিকিৎসার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজন। আর তা হলো রুগ্ন ব্যক্তিকে পুনঃস্বাস্থ্যে
প্রতিষ্ঠিত করা। রুগ্নতাকে সুস্থতায় পর্যবসিত করা, রূপান্তরিত করা একমাত্র কর্ম ও লক্ষ্য।
আর এই ব্রত পালন করিতে গেলে চিকিৎসকদের সর্বতোভাবে উপযুক্ততা অর্জন করিতে হবে। সেজন্য
হ্যানিম্যান উপদেশ দিয়েছেন যে ‘রোগীকে নীরোগ’ করাই একজন চিকিৎসকের জীবনের প্রধান লক্ষ্য।
আরোগ্য কথাটির অর্থ রোগীর শুধু মাত্র দু-একটি কষ্টকর রোগলক্ষণ দূরীভূত করাকেই বুঝায়
না, রোগীকে সম্পূর্ণভাবে নীরোগ করিয়া রোগীর স্বাস্থ্য পুনঃরুদ্ধার করাকে বুঝায়। যে
পর্যন্ত রোগী তাহার পূর্ব স্বাস্থ্য পুনঃরুদ্ধার করিতে সমর্থ হইবে না ততক্ষন পর্যন্ত রোগী নীরোগ হইল
না বুঝিতে হইবে। তীব্রতর লক্ষণ কমিয়া গেলে যদি মনে করা হয় রোগীর রোগ ভাল হইয়া গেল কিন্তু
তাহা সঠিক নয়। রোগীটি সর্বাঙ্গীনভাবে সুস্থ হইল কিনা তাহা ভাবিয়া দেখিতে হইবে। উদাহরনস্বরূপ,
কোন রোগীর জ্বর হইল, তাহার পর কোন ঔষধ প্রয়োগ করিয়া জ্বর ভাল হইয়া গেল। কিন্তু মুখের
স্বাদ নষ্ট হইয়া গেল, কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না বা তরল বাহ্যে হয়, মাথা ঘোরে, অনিদ্রা সহ
অন্যান্য আরো লক্ষন রহিয়া গেল। এইরূপ স্থলে রোগীর জ্বর ভাল হইল কিন্তু রোগী নীরোগ হয়
নাই। গাত্রতাপ কমিলেই জ্বর ভাল হইল আপতদৃষ্টিতে বলা চলে কিন্তু রোগী আরোগ্য হইয়াছে
তাহা বলা চলে না। এমতাবস্থায় রোগীর সমস্ত রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করিয়া রোগীকে ঔষধ প্রয়োগ
করিতে হইবে যাহাতে শুধু গাত্রতাপ নহে রোগীতে
প্রদত্ত সকল রোগ লক্ষণ দূরীভূত হয় এবং রোগী পুনঃস্বাস্থ্য ফিরে পায়। সেক্ষেত্রে আমরা
বলতে পারি রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিল।
পূর্ণ আরোগ্য করিতে হলে রোগীকে কোন রোগের নামের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা
যাবে না। রোগী চিকিৎসা করিতে হবে রোগীর লক্ষণের উপর ভিত্তি করে। হোমিওপ্যাথিতে কোন
রোগের চিকিৎসা করা হয় না রোগীর চিকিৎসা করা হয়। একজন চিকিৎসকের মূল লক্ষ্য রোগীকে পুনঃস্বাস্থ্যে
প্রতিষ্ঠিত করতে হলে চিকিৎসকের উচিত রোগীকে রোগের উপর ভিত্তি করে নয় রোগীতে প্রদত্ত
সমস্ত রোগ লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা। রোগী চিকিৎসাকালে কোন একটি অংগ বা কোন
একটি লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা যাবে না। রোগীকে চিকিৎসা করার সময় রোগী হতে
সমস্ত রোগ লক্ষণ ও সমস্ত অংগের লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে। প্রাপ্ত সমস্ত লক্ষণের উপর ভিত্তি
করে রোগীতে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। কোন একটি অংগ বা একটি লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা
করা হলে হয়তো বা উক্ত লক্ষণ দূরীভূত হবে কিন্তু রোগী পূর্ণ আরোগ্য লাভ করবে না। এতে
চিকিৎসকের লক্ষ্য অর্জন হবে না।
অতএব, একজন চিকিৎসকের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রোগীকে পুনঃস্বাস্থ্যে প্রতিষ্ঠিত
করা।

0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন