রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

কোষ্ঠকাঠিন্য কি, এর কারন, প্রতিকার ও চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর একটা সমস্যা। সাধারণত সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানা অথবা মলত্যাগের বেগ হলে এবং শুষ্ক ও কঠিন পায়খানা হলে সেটাই কোষ্ঠকাঠিন্য। এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘসময় ধরে বসে থেকেও পায়খানা হয় না অথবা হলেও সম্পূর্ণ হয়নি এমন মনে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের চিকিৎসার চেয়ে যা করলে বা যেভাবে চললে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না সেভাবে চলাই শ্রেয়। এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার জীবনে কখনোই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়নি। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে লজ্জা না পেয়ে বরং দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেউ যদি পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরেও, সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানা করেন, তখন এটাকে জটিল সমস্যা বিবেচনা করে এর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষন আছে। যেমন-
  • পায়খানা শক্ত হওয়া।
  • পায়খানা করতে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সময় লাগা।
  • পায়খানার সাথে রক্ত আসা।
  • পায়খানা করার জন্য অতিরিক্ত চাপের দরকার হওয়া।
  • আঙুল কিংবা অন্য কোনো ভাবে পায়খানা বের করা ইত্যাদি।
  • অনেক সময় নিয়ে পায়খানা করার পরও মনে হবে পায়খানা সম্পূর্ণ হয়নি।
  • মলদ্বারের আশপাশে কিংবা তলপেটে ব্যথা অনুভব করা।

কোষ্ঠকাঠিন্য-এর কারণ

কোষ্ঠকাঠিন্য এমন এক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলের সাথে রক্তপাত, পাই‌লস, আলসার, পেটে ব্যথা, এনালফিসার এবং ফিসটুলার মতো জটিল রোগও হতে পারে।আবার স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। নিম্নে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কিছু কারন বর্ণনা করা হলঃ
  • শাকসবজি ও ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার কম খেলে।
  • ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ভিটামিন জাতীয় ওষুধ যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে, প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
  • কায়িক পরিশ্রমের অভাব, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে এই সমস্যা হতে পারে।
  • নিয়মিত মলের বেগ চেপে রাখলে এবং বিষয়টি যদি অভ্যাসে পরিণত হয় তবে এ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • থাইরয়েডগ্রন্থির কারণে অনেক ক্ষেত্রে শরীরের বিপাকক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে বুকজ্বালা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • দুগ্ধজাতীয় খাবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া কিংবা মলত্যাগের সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • অবসাদ কিংবা বিষণ্ণতা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি অন্যতম কারণ। মানসিক সমস্যার কারণে অনেক সময় খাদ্য পরিপাকে সমস্যা হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমানে পান করলে এই সমস্যা হতে পারে।
  • অনেক সময় গর্ভধারণের ফলে এই সমস্যা হতে পারে। কয়েকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সাথে গর্ভধারণের লক্ষণ প্রকাশ পেলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • কিছু রোগের কারনে, যেমন- অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে টিউমার কিংবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি আবার দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

  • প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গরম পানি পান করতে পারেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্রতিদিন বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া ও মাংস খাওয়া কমাতে হবে।
  • প্রতিদিন সকালে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে।
  • অধিক দুশ্চিন্তা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি কারন। তাই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
  • অনেকে মনে করেন রুটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে কিন্তু আটা, বিশেষ করে লাল আটায় অধিক পরিমাণে আঁশ থাকে। তাই লাল আটায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই তবে পরোটার ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই অধিক পরিমানে পরোটা না খাওয়াই ভাল।
  • প্রতিদিন সময় করে কায়িক পরিশ্রম অথবা ব্যয়াম করতে হবে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক হতে পারে।

 জটিলতা

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-
*মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া
* অর্শ বা পাইলস, ফিস্টুলা বা ভগন্দর, এনাল ফিশার বা গেজ রোগ হওয়া
* রেকটাল প্রোলাপস তথা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসা
* প্রস্রাবের সমস্যা
* ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন বা অন্ত্রে ব্লক বা প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যাওয়া।

কোষ্ঠকাঠিন্য-এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

অ্যালুমিনা: নরম, স্টিকি মল ত্যাগের অসুবিধা।
ব্রায়োনিয়া: বড়, শক্ত, শুকনো মল ত্যাগে দারুণ অসুবিধা; মল অন্ধকারের মতো যেন পোড়া; ব্যক্তি বিরক্তিকর এবং অসুস্থ স্বভাবের।
গ্রাফাইটিস: মলত্যাগ করার তাগিদ নেই; অন্ত্রের গতিবিধি ছাড়াই কয়েক দিন যেতে পারে; গোলাকৃতির বলের মতো মলগুলি শ্লেষ্মা দিয়ে একসাথে আটকে যায়, বেদনাদায়ক হয়; রেকটাল ফিশার বা ফাটল, হেমোরয়েডস যা জ্বলায় এবং চুলকায়; মল পেরিয়ে যাওয়ার পরে মলদ্বার ব্যথা হয় এবং মুছা থেকে ব্যথা হয়;
ন্যাট্রাম মিউরিটিকাম: শক্ত, টুকরো টুকরো স্টুল যা মলদ্বার রক্তপাত এবং ব্যথা সৃষ্টি করে; মলদ্বার সংকোচন, রক্তপাত, এবং ব্যথা।
নাক্স ভোমিকা: "ল্যাক্সেটিভ অভ্যাস" ভাঙতে সহায়তা করার জন্য যেখানে লোকটি জোলানো না নিয়ে তাদের অন্ত্র সরাতে অক্ষম হয়; এক ডোজ কয়েক দিন শোবার আগে ব্যবহার করা হয়।
সিলিকা: "বশফুল স্টুল" যা শুরু হয় এবং আবার ফিরে যায়; মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা এবং প্রায়শই শ্লেষ্মা জমে থাকে।
সালফার: মলদ্বার বিচ্ছিন্নতা থেকে বেদনাদায়ক মল; মলদ্বারে জ্বলন সহ অকার্যকর আবেদন থাকে; ডায়রিয়ার সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য পর্যায়ক্রমিক হতে পারে; মল কঠিন, অন্ধকার এবং শুকনো; হেমোরয়েডসের প্রবণতা।


বিঃদ্রঃ নিজ উদ্দোগে কোন ঔষধ সেবন করবেন না, নিকটস্থ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ সেবন করুন


Share:

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Clock

Facebook Page

ব্লগ সংরক্ষাণাগার