প্রথম মাসঃ প্রথম কয়েকদিন ভ্রুণ অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তিন চারি দিনের
পরেই ভ্রুণটির চওড়ায় মাপ দাঁড়ায় ০.০৪ ইঞ্চির মত। ৭-৮ দিনে .০৫ ইঞ্চি হয়। প্রথমেই শিশুর
মাথা ও মস্তিষ্ক তৈরী হতে শুরু হয় এবং মাথাটাই সবচেয়ে তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। প্রথম মাসের
শেষাশেষি ভ্রুণের শরীরের ভিতরে যন্ত্রগুলি তৈরী হতে শুরু হয়। হৃদপিন্ডটি এই সময় একটি
ছোট নলের মতো দেখায় ও ধুকধুকি তখন হইতেই শুনা যায়। ভ্রুণের শিরদাঁড়াও এই সময় বেড়ে
ইঠতে শুরু করে এবং নিচের অংশ লেজের মত দেখায়। ভ্রুনের প্রত্যঙ্গও এই সময় শুরু হয়। প্রথম
মাসের ভ্রুণ জরায়ুর মধ্যে গোল পারিয়ে থাকে এবং লম্বায় .০২৫ ইঞ্চি বা .৫০ ইঞ্চির মতো
হয়।
দ্বিতীয় মাসঃ এই মাসে শিশুর হাত-পা ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠে। এই সঙ্গেই এক জোড়া
কনুই ও হাটু এবং পাতলা চামড়া দিয়ে জোড়া হাত পায়ের আঙ্গুল তৈরী হয়। শিরদাঁড়ার লেজের
অংশটাও পুরোপুরি তৈরি হয় এবং বেশ বড় দেখায়। ফুসফুস, হৃদপিন্ড, পাকস্থলী, যকৃৎ, ক্ষুদ্র
ও বৃহৎ অন্ত্রগুলি দেহের মধ্যে যথাস্থানে ক্রমশঃ সরে যেতে থাকে। মুখমন্ডলের বিভিন্ন
অংশ যথা, চোখের পাতা, চোখের কোটর, নাক ইত্যাদিও এ সময়ে স্পষ্ট হয়ে উঠে। যদিও উপরিউক্ত
যন্ত্রগুলি বাড়িতে থাকে, তথাপি উহারা অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং গর্ভস্থ শিশু লম্বায় মাত্র
এক ইঞ্চির মত থাকে এবং ওজন মাত্র এক আউন্সের দশভাগের একভাগের চেয়েও কম থাকে। এই মাসের
শেষভাগে গর্ভফুল বিকশিত হয়ে পরিণত আকার ধারণ করে এবং গর্ভস্থ ভ্রুণ জলের মধ্যে ডুবে
থাকে।
তৃতীয় মাসঃ এ মাসের শিশুর লেজ আকারে কমতে শুরু করে এবং মাসের শেষে উহা সম্পূর্ণ
লোপ পায়। হাতের ও পায়ের আঙ্গুলের মধ্যেকার চামড়ার জোড়গুলি খসে পড়ে। হাত-পায়ের আঙ্গুলের
নখ দেখা দেয় এবং মুখের মাড়িতে ছোট ছোট মাংসের কুড়ি দেখা দেয়। এ মাসের শিশুর ওজন এক
আউন্সের কিছু কম থাকে। এই মাসের শেষে শিশুর যৌন অঙ্গগুলি প্রথম স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শিশু
যদি মেয়ে হয়ে থাকে তবে এই মাসের শেষে তার একটি ক্ষুদ্র জরায়ুও তৈরী হতে শুরু হয়।
চতুর্থ মাসঃ এই মাসে সন্তান দ্রুত বাড়তে থাকে। এই মাসের শেষে শিশু চার থেকে
ছয় ইঞ্চির মত লম্বা হয় এবং তার ওজন বেড়ে প্রায় চার আউন্সের মতো হয়। এই সময় ভ্রুণটি
একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর মতই দেখতে লাগে। এই মাসে শিশুর মাথায় চুল ও গায়ে লোমের আভাস দেখা
যায়। চার মাসের শেষে মাংসপেশীগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং শিশুটি একটু একটু নড়াচড়া করতে
আরম্ভ করে।
পঞ্চম মাসঃ এ মাসে মাংসপেশীগুলি আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রসূতি বেশ অনুভব
করে যে, শিশু বেশ নড়াচড়া করিতেছে। এই মাসেই স্টেথোস্কোপের সাহায্যে শিশুর হৃদস্পন্দন
প্রথম ধরতে পারা যায়।
ষষ্ঠ মাসঃ এই মাস হইতেই শিশুর আকার ও ওজন দ্রুত বেড়ে উঠে। প্রসূতির পেটের
(জরায়ুর) আয়তন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই মাসের শেষভাগে শিশু লম্বায় দশ ইঞ্চির মতো হয় ও
ওজন প্রায় দেড় পাউন্ড হয়। এই মাসে শিশু খুব বেশী নড়াচড়া করতে থাকে, মনে হয় গুতো মারছে।
এই প্রকার নড়াচড়া শেষ মাস অবধি চলতে থাকে। এই নড়াচড়া সর্বক্ষণ নাও হতে পারে, কখনও কখনও
প্রসূতি নড়াচড়া একেবারেই অনুভব না করতে পারে।
সপ্তম মাসঃ এ মাসে শিশু নানাভাবে নড়াচড়া করে ও অবস্থানেরও কোন ঠিক থাকে না,
তবে সাধারনতঃ মাথা নিচের দিকে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে আড়াআড়িভাবে বা পা ও পাছা নিচের
দিকে থাকে। শিশুর শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি এই মাসে পুরোপুরি বিকশিত হয়। এই মাসের
শেষভাগে যদি কোন কারণে সন্তান প্রসব করে উপযুক্ত যত্ন ও তত্ত্বাবধান করিলে শিশু বেচে
যায়।
অষ্টম মাসঃ এই মাসে শিশু দেহে একটু একটু করে মদে বা চর্বি জমতে শুরু করে। শিশুর
ওজন চার পাউন্ডের মতে হয়। এই মাসে ভূমিষ্ঠ হলে সন্তানের বেচেঁ থাকার সম্ভাবনাই বেশী।
নবম মাসঃ এই মাসে শিশুর মাথায় সুন্দর চুল দেখা যায় এবং শরীরে যে চুল পূর্বে
দেখা গিয়াছিল তা বেশীর ভাগই খসে যায়। শিশু এই মাসে আরও দ্রুত বড় হয়। এই মাসে শিশুর
ওজন পাঁচ হইতে ছয় পাউন্ড হয় এবং লম্বায় ১৬-১৮ ইঞ্চি হয়। অবশ্য দেশ বা ব্যক্তিবিশেষে
এর তারতম্য হতে পারে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন