বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

গর্ভবতী মায়ের করণীয়

1.       গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা নারীসত্ত্বার সম্পূর্ণ বিকাশ।

2.      গর্ভকালীন সময় কিছু উপসর্গ থাকে যেমন: ক্ষুদামন্দা, বমি ভাব বা বমি হওয়া, খাবার অরুচি, দুর্বলতা ইত্যাদি।

3.     এ সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খাবেন।

4.   পু্ষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খাবেন। যেমন: দুধ, ডিম, সবজি, ফল, মাছ, মাংস ইত্যাদি। ফাস্ট ফুড ও বাহিরের খাবার পরিহার করবেন।

5.      প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাবেন।

6.      দুপুরের আহারের পর ২ ঘন্টা বিশ্রাম নিবেন, রাতে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমাবেন।

7.      বাম বা ডান কাতে শোবেন ৬ মাস পর থেকে।

8.      স্বাভাবিক কাজকর্ম, হাঁটা চলা করবেন, ভারী কাজকর্ম থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবেন।

9.      সূতী, ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক কাপড় পরবেন।

10.   উচুঁ হীলযুক্ত জুতা পরবেন না।


11.   ঝুঁকিপূর্ণ ও দূরের ভ্রমন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবেন।

12.  প্রথম ৩ মাস ও শেষ ১ মাস সহবাস বিপদজনক হতে পারে তাই পরিহার করবেন।

13.  ৪ মাস থেকে ৭ মাসের মধ্যে টিটেনাস টিকা নিতে হবে।

14.   বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখবেন ৬ মাস পর হতে। সারাদিন কমপক্ষে ১০-১২ বার বাচ্চার নড়াচড়া বোধ করবেন।

15.  হঠাৎ পা ফুলে যাওয়া, রক্তস্রাব, পানি ভেঙ্গে যাওয়া, বাচ্চা নড়াচড়া কম উপলব্ধি করা বিপদজনক, এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

16.  গর্ভকালীন সময়ে আপনি সন্তান লালনের ও বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন।

17.   যে কোন অনুবিধা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

18.  নিয়মিত ঔষধ খাবেন এবং বিধি নিষেধ মেনে চলবেন।

19.   জন্মের পর পরই শিশুকে মায়ের বুকের প্রথম শাল দুধ খাওয়াবেন।

20.  মনে রাখবেন সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দিতে প্রয়োজন একজন সুস্থ্য মা।

Share:

সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

মানব পরিপাকতন্ত্র আলোচনা পর্ব-৪।। ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য পরিপাক (Degestion of Food in Small Intestine)

ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য পরিপাক (Degestion of Food in Small Intestine)

পাকস্থলির পাইলোরিক স্ফিংক্টারের পর থেকে বৃহদন্ত্রের সূচনায় ইলিওকোলিক স্ফিংক্টার পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৬-৭ মিটার লম্বা, পাচানো অংশকে ক্ষুদ্রান্ত্র বলে। ক্ষুদ্রান্ত্র তিনটি অংশে বিভক্ত যথা-ডিওডেনাম, জেজুনাম এবং ইলিয়াম। ডিওডেনাম হচ্ছে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ যা দেখতে U এর মত ও ২৫-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। জেজুনাম মধ্যাংশ লম্বায় আড়াই মিটার। শেষ অংশটি ইলিয়াম যা ক্ষুদ্রান্ত্রের তিন পঞ্চমাংশ গঠন করে।

সব ধরনের খাদ্যের চূড়ান্ত পরিপাক ক্ষুদ্রান্ত্রেই সংঘটিত হয়। খাদ্যের উপর তিন ধরনের রস যেমন-পিত্তরস, অগ্ন্যাশয় রস ও আন্ত্রিক রস ক্রিয়া করে।

যান্ত্রিক পরিপাকঃ

·        আন্ত্রিক রসের মিউসিনের ক্রিয়ায় ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যস্থিত খাদ্যস্তু পিচ্ছিল হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়।

·        ব্রুনার্স গ্রন্থি ও গবলেট কোষ থেকে মিউকাস তৈরি হয়। মিউকাস ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচিরকে এনজাইমের কার্যকরিতা থেকে রক্ষা করে।

·        পিত্তরস পরোক্ষভাবে অন্ত্রে জীবানুর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

·        পিত্তলবনগুলো ক্ষুদ্রান্ত্রের পেশির ক্রমসংকোচন বাড়িয়ে বৃহদন্ত্রের দিকে খাদ্যের গতি বৃদ্ধি করে।

·        কোলিসিস্টোকাইনিন নামক হরমোন পিত্তাশয়ের সংকোচন ঘটিয়ে পিত্তাশয়ে সঞ্চিত পিত্তরস ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌছে দেয়।

·        পিত্তলবন স্নেহদ্রব্যকে অবদ্রবনের মাধ্যমে সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনায় পরিনত করে।



রাসায়নিক পরিপাকঃ

পাকস্থলি থেকে আগত অম্লীয় কাইম অর্ধ্ব পরিপাককৃত শর্করা ও আমিষ এবং প্রায় অপরিপাককৃত স্নেহদ্রব্য নিয়ে গঠিত। কাইম ক্ষুদ্রান্ত্রের গহ্বরে পৌছালে অন্ত্রের প্রাচীর থেকে এন্টেরোকাইনিন, সিক্রেটিন এবং কোলেসিস্টোকাইনিন নামক হরমোন ক্ষরিত হয়। এসব হরমোনের প্রভাবে পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয় ও আন্ত্রিক গ্রন্থি থেকে যথাক্রমে পিত্তরস, অগ্ন্যাশয় রস ও আন্ত্রিক রস নিঃসৃত হয়।

পিত্তরস ক্ষার জাতীয় তরল পদার্থ। এতে কোন এনজাইম থাকে না। পিত্তরসের সোডিয়াম বাইকার্বোনেট উপাদানটি পাকস্থলি থেকে আগত Hcl কে প্রশমিত করে অন্ত্রের অভ্যন্তরে একটি ক্ষারীয় মাধ্যম তৈরি করে যা ক্ষুদ্রান্ত্রে বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

শর্করা পরিপাক: অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত রসে শর্করা পরিপাকের জন্য নিচে বর্ণিত এনজাইম ক্রিয়া করে।

১. অ্যামাইলেজ এনজাইম স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন জাতীয় জটিল শর্করাকে মল্টোজে পরিণত করে।

২. মল্টোজ এনজাইম মল্টোজ জাতীয় শর্করাকে গ্লুকোজে পরিণত করে।

আন্ত্রিক রসে শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাককারী নিম্নলিখিত এনজাইম ক্রিয়া করে:

১. আন্ত্রিক অ্যামাইলেজ স্টার্চ, ডেক্সট্রিন প্রভৃতি পলিস্যাকারাইডকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে মল্টোজ, মল্টোট্রায়োজ ও ডেক্সট্রিন উৎপন্ন করে।

২. আইসোমল্টেজ এনজাইম আইসোমল্টোজ জাতীয় শর্করাকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে মল্টোজ ও গ্লুকোজ উৎপন্ন করে।

৩. মল্টোজ এনজাইম মল্টোজকে বিশ্লিষ্ট করে গ্লুকোজ তৈরি করে।

৪. সুক্রেজ এনজাইম সুক্রোজ নামক ডাইস্যাকারাইডকে ভেঙ্গে এক অণূ গ্লুকোজ ও এক অণু ফ্রুক্টোজ সৃষ্টি করে।

৫. ল্যাক্টেজ এনজাইম দুধের ল্যাক্টোজ নামক ডাই স্যাকারাইডকে ভেঙ্গে এক অণু গ্লুকোজ ও এক অণূ গ্যালাক্টোজ পরিণত করে।

আমিষ পরিপাক: অগ্ন্যাশয় রসে অবস্থিত এনজাইমসমূহ আমিষ জাতীয় খাদ্যের উপর নিম্নরুপ ক্রিয়া করে।

১. ট্রিপসিন এনজাইম নিষ্ক্রিয় ট্রিপসিনোজেনরূপে ক্ষরিত হয়। ডিওযেনামের মিউকোসা নি:সৃত এন্টোরোকটিন এনজাইমের সহায়তায় এটি সক্রিয় ট্রিপসিনে পরিনত হয়। ট্রিপসিন প্রোটিওজ ও পেপটোন জাতীয় আমিষকে পলিপেপটাইডে পরিনত করে।

২.কাইমোট্রিপসিন নিষ্ক্রিয় কাইমোট্রিপসিনোজেনরূপে ক্ষরিত হয়। পরে ট্রিপসিনের ক্রিয়ায় এটি সক্রিয় কাইমোট্রিপসিনে পরিনত হয়। এটি প্রোটিওজ ও পেপটোনকে ভেঙ্গে পলিপেপটাইডে পরিনত হয়।

৩. কার্বোক্সিপেপটাইডেজ এনজাইম পলিপেপটাইডের প্রান্তীয় লিঙ্কেজকে সরল পেপটাইড অ্যামিনো এসিডে রূপান্তরিত করে।

৪. অ্যামিনোপেপটাইডেজ এনজাইম পলিপেপটাইডকে ভেঙ্গে অ্যামিনো এসিডে পরিনত করে।

৫. ট্রাইপেপটাইডেজ এনজাইম ট্রাইপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিডে পরিনত করে।

৬. ডাইপেপটাইডেজ এনজাইম ডাইপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিড পরিনত করে।

৭. কোলাজিনেজ এনজাইম মাছ ও মাংসে বিদ্যমান কোলাজেন জাতীয় প্রোটিনকে সরল পেপটাইডে রূপান্তরিত করে।

৮. ইলাস্টেজ এনজাইম যোজক টিস্যুর প্রোটিন ইলাস্টিনকে ভেঙ্গে পেপটাইড উৎপন্ন করে।

আন্ত্রিক রসে আমিষ পরিপাককারী এনজাইম অ্যামিনোপেপটাইডেজ পলিপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিডে পরিনত করে।

স্নেহ পরিপাক:

স্নেহ পরিপাকে পিত্তরস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পিত্তরসে কোন এনজাইম থাকে না। পিত্তরসে বিদ্যমান পিত্তলবন সোডিয়াম গ্লাইকোকোলেট ও সোডিয়াম টরোকোলেট স্নেহ জাতীয় খাদ্যকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনায় পরিনত করে। এ প্রক্রিয়াকে অবদ্রবন বলে।

অগ্ন্যাশয় রসে স্নেহজাতীয় খাদ্র বা ফ্যাট পরিপাককারী এনজাইম স্নেহকনাকে নিম্নরূপে পরিপাক করে-

১. লাইপেজ নামের এনজাইম স্নেহকনাকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিনত করে।

২. ফসফোলাইপেজ এনজাইম ফসফোলিপিডকে ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল ও ফসফোরিক এসিডে পরিনত করে।

৩. কোলেস্টেরল এস্টারেজ এনজাইম কোলেস্টেরল এস্টারের উপর ক্রিয়া করে ফ্যাটি এসিড ও কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে।

আন্ত্রিক রসে নিম্নলিখিত স্নেহ পরিপাককারী এনজাইম ক্রিয়া করে:

১. লাইপেজ এনজাইম পিত্তলবনের প্রভাবে স্নেহকনায় পরিনত হওয়া লিপিডকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে মনোগ্লিসারাইড ও ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে। পরবর্তীতে তা ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে রূপান্তরিত হয়।

২. লিসিথিনেজ এনজাইম লেসিথিনকে ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল, ফসফরিক এসিড ও কোলিনে পরিনত করে।

৩. মনোগ্লিসারাইডেজ কোষের ভেতরে মনোগ্লিসারাইডকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিনত করে।

এছাড়াও আন্ত্রিক গ্রন্থির নিউক্লিয়েডেজ, নিউক্লিওটাইডেজ ও নিউক্লিওসাইডেজ এনজাইমসমূহ নিউক্লিক এসিড ও এর উপাদাসসমূহে ফসফেট গ্রুপ, পেন্টোজ শ্যুগার ও নাইট্রোজেন বেস এ ভেঙ্গে দেয়।

Share:

মানব পরিপাকতন্ত্র আলোচনা পর্ব-৩।। পাকস্থলিতে খাদ্য পরিপাক (Degestion of Food in Stomach)

পাকস্থলিতে খাদ্য পরিপাক (Degestion of Food in Stomach)

পাকস্থলিটি ডায়াফ্রামের নিচে উদরের উপরের অংশে অবস্থিত প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১৫ সেন্টিমিটির প্রস্থে বাঁকানো থলির মতো অংশ। একে কয়েকটি অংশে ভাগে করা যায়, যথা-

১. যে অংশে অন্ননালি উন্মুক্ত হয় তা কার্ডিয়া।

২. কার্ডিয়ার বাম পাশে পাকস্থলি প্রাচীল যা গম্বুজাকার ধারণ করে তা ফানডাস।

৩. ডান অবতল ও বাম উত্তল কিনারা যথাক্রমে ছোট ও বড় বাঁক।

৪. যে অংশটি ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়েছে তা পাইলোরাস নামে পরিচিত।

কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক অংশে একটি করে বৃত্তাকার পেশিবলয় আছে। বলয়দুটিকে যথাক্রমে কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক স্ফিংক্টার বলে।



যান্ত্রিক পরিপাক:

·        মুখ থেকে চর্বিত খাদ্য অন্ননালিপথে পাকস্থলিতে এসে ২-৬ ঘন্টাকাল অবস্থান করে।

·        এসময় প্যারাইটাল কোষ থেকে HCl ক্ষরিত হয়ে খাদ্য বাহিত অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়।

·        মসৃণ পেশির ৩টি স্তর নিয়ে পাকস্থলি গঠিত। পেশিস্তর বিভিন্ন দিকমুখি হওয়ায় পাকস্থলি প্রাচীর নানাদিকে সঞ্চালিত হয়ে মুখগহ্বর থেকে আসা অর্ধচূর্ণ খাদ্যকে পেস্ট-এ পরিণত করে।

·        এসময় গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরিত হয়ে পাকস্থলির যান্ত্রিক চাপে পিস্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশে ঘন মিশ্রণে পরিণত হয়। খাদ্যের এ অবস্থা কাইম বা মন্ড নামে পরিচিত। এর উপর গ্যাস্টিক গ্রন্থি নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক কাজ শুরু হয়ে যায়।

রাসায়নিক পরিপাক:

পাকস্থলির প্রাচীর পেশিবহুল এবং গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি সমৃদ্ধ। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি এক ধরনের নলাকার এবং চার ধরনের কোষে গঠিত। প্রত্যেক ধরনের কোষের ক্ষরণ আলাদা। সম্মিলিতভাবে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির ক্ষরনকে গ্যাস্ট্রিক জুস বলে। এর ৯৯.৪৫% ই পানি। গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন এই জুস ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

শর্করা পরিপাক: পাকস্থলি থেকে শর্করাবিশ্লেষী কোন এনজাইম নিঃসৃত হয় না। ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোন পরিবর্তন ঘটে না।

আমিষ পরিপাক: গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রোটিওলাইটিক নামক এনজাইম থাকে। এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের Hcl এর সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে পেপসিন ও রেনিন নামক সক্রিয় এনজাইমে পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিওজ ও পেপটোন এ পরিণত করে। রেনিন দুগ্ধ আমিষ কেসিনকে প্যারাকেসিনে পরিণত করে।

স্নেহ পরিপাক: পাকস্থলির প্রাচীর থেকে গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়। এটি প্রশমিত স্নেহদ্রব্যকে ফ্যাটি এসিড ও ‍গ্লিসারল এ পরিনত করে।

অর্ধপাচিত এ খাদ্য ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। পাকস্থলির পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংক্টার পেশির বেড়ী যা ছিদ্রপথকে বেষ্টন করে থাকে পাকস্থলি থেকে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
Share:

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১

মানব পরিপাকতন্ত্র আলোচনা পর্ব-২। মানুষের খাদ্য পরিপাক প্রণালী (Process of Human Digestion)

 মানুষের খাদ্য পরিপাক প্রণালী (Process of Human Digestion)

মানুষে অধিকাংশ খাদ্য (শর্করা, আমিষ ও স্নেহদ্রব্য) বৃহৎ অনু হিসেবে মুখগহ্বরে গৃহীত হয়। খাদ্যবস্তুর এ বৃহত্তর জটিল অনুগুলো ক্ষুদ্রতম অনুতে বিশ্লিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মানব দেহের কোন কাজে আসে না। সেজন্য শর্করা, আমিষ ও স্নেহদ্রব্য এ তিনটি খাদ্যের উপাদানকে পরিপাক করতে হয়। নিচে খাদ্য উপাদানের নাম, পরিপাক এনজাইম ও উৎপন্ন দ্রব্য ছক আকারে উপস্থাপন করা হলো।

খাদ্যের উপাদান

প্রধান এনজাইম

উৎপন্ন দ্রব্য

শর্করা

(ভাত, রুটি, চিনি, শাক-সবজি)

অ্যামাইলোলাইটিক এনজাইম

(টায়ালিন, অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, সুক্রেজ)

গ্লুকোজ

আমিষ

(মাছ, মাংস, ডাল)

প্রোটিওলাইটিক এনজাইম

(পেপসিন, ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, অ্যামিনোট্রিপসিন)

অ্যামিনো এসিড

স্নেহদ্রব্য

(ভোজ্যতেল, ঘি, মাখন, প্রাণিজ চর্বি)

লাইপোলাইটিক এনজাইম

(পাকস্থলীয় ও আন্ত্রিক লাইপেজ, ফসফোলাইপেজ, কোলেস্টেরল, এস্টারেজ, লেসিথিন)

ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল

 


মানুষের পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশে শর্করা, আমিষ ও স্নেহদ্রব্যের পরিপাক সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

মুখগহ্বরে খাদ্য পরিপাকঃ

মানুষের পৌষ্টিকনালি মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ৮-১০ মিটার লম্বা। পৌষ্টিকনালির শুরু মুখ থেকে। নাসাছিদ্রের নিচে অবস্থিত এক আড়াআড়ি ছিদ্র যা একটি করে উপরের ও নিচের ঠোঁটে বেষ্টিত থাকে। মুখছিদ্রের মাঝে খাদ্যবস্তু মুখগহ্বর বা মুখবিবরে প্রবেশ করে।

মুখপরবর্তী গহ্বরটি মুখবহ্বর। একে ঘিরে এবং এর ভিতরে কয়েকটি অঙ্গ অবস্থিত। এসব অঙ্গের মধ্যে গাল, দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা ও তালু প্রধান।

মুখগহ্বরের উর্ধ্ব প্রচীর তালুর অস্থি ও পেশি দিয়ে সামনের প্রাচীল ঠোটের পেশি দিয়ে এবং পাশের প্রাচীর গালের পেশি নিয়ে গঠিত। তালুর অগ্রভাগ অস্থিনির্মিত ও শক্ত, পশ্চাৎভাগ পেশল ও নরম। কোমল তালুর পেছনের প্রান্তের মধ্যভাগ থেকে একটি পেশল আলজিহ্বা মুখগহ্বরে ঝুলে থাকে।

নিম্ন চোয়ালের অস্থির সাথে জিহ্বা যুক্ত থাকে। এর পৃষ্ঠতলে থাকে ফ্লাস্ক আকৃতির স্বাদকুড়ি। স্বাদকুড়িগুলো খাদ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল। যেমন- জিহ্বার অগ্রপান্তে মিষ্টি, অগ্রভাগের দুপাশে নোনা, পশ্চাৎভাগের দুপাশে টক এবং পেছন দিকে তিক্ত স্বাদ গ্রহন করে। পাচ-দশ দিনের মধ্যে খাদ্যের ঘসায় স্বাদকুড়ি নষ্ট বা ছিন্ন হয়ে যায় এবং প্রতিস্থাপিত হয়।



মানুষের মুখগহ্বরের দুপাশে তিনজোড়া লালাগ্রন্থি অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে দুপাশের কানের নিচে প্যারোটিড গ্রন্থি, নিচের চোয়ালের ভিতর দিকে সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি এবং জিহ্বার তলায় সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি। গ্রন্থিগুলো রস ক্ষরণকারী এবং এপিথেলিয়ামে আবৃত গোল বা ডিম্বাকার থলি বিশেষ। থলির প্রাচীরে যে সেরাস কোষ ও মিউকাস কোষ রয়েছে তা থেকে রস ক্ষরিত হয়। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালা কিছুটা অম্লীয় এবং এর অধিকাংশই পানি (৯৫.৫%)। একজন  সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ মিলিলিটার লালা ক্ষরণ করে।

মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু দুভাবে পরিপাক হয় যান্ত্রিক ও রাসায়নিক।

যান্ত্রিক পরিপাকঃ

·        সামান্যতম স্বাদ, গন্ধ ও খাদ্য গ্রহণে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্ক যে সংকেত পায় তার প্রেক্ষিতে মস্তিষ্ক লালাগ্রন্থিগুলোতে লালা ক্ষরণের বার্তা পাঠায়। লালা মূলত পানিতে গঠিত এবং খাদ্যকে এমনভাবে নরম ও মসৃন করে যাতে দাতের কাজ দ্রুত ও সহজ হয়।

·        চার ধরনের দাত যেমন- ইনসিসর, ক্যানাইন, প্রিমোলার ও মোলার এর নানা ধরনের কর্মকান্ডের ফলে বড় খাদ্যখন্ড কাটা-ছেড়া, পেষণ-নিষ্পেষণ শেষে হজম উপযোগী ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়।

·        জিহ্বা নড়াচড়া ও সংকোচন প্রসারণক্ষম পেশল অংশ। এটি স্বাদ নেওয়া ছাড়াও দাতে আটকে থাকা খাদ্যকনা সরাতে, মুখের চারপাশে ঘুরিয়ে বিভিন্ন দাতের নিচে পৌছাতে, লালা মিশ্রণে এবং সবশেষে গিলতে সাহায্য করে।

·        যান্ত্রিক পরিপাকের সময় খাদ্যখন্ড নিষ্পেষিত হয়ে নরম খাদ্যমন্ড তে পরিণত হয়। জিহ্বার উপরতল যখন খাদ্যমনএক শক্ত তালুর বিপরীতে রেখে চাপ দেয় তখন খাদ্যমন্ড পিছনে দিকে যেতে বাধ্য হয়।

·        পেছনে কোমল তালূ থাকায় খাদ্যপিন্ড নাসাছিদ্রপথে প্রবেশে বাঁধা পায়।

·        কোমল তালু পার হলেই খাবার গলবিলে এসে পৌছায়। গলবিল থেকে দুটি নালি চলে গেছে-একটি শ্বাসনালি অন্যটি অন্ননালি।

·        জিহ্বার গোড়ার দিকে শ্বাসনালির অংশে ছোট উদগত অংশ হিসেবে অবস্থিত আলজিহ্বা অন্ননালির উপর এমন এক উর্ধ্বগামী বলপ্রয়োগ করে যাতে চিবানো খাদ্য শ্বাসনালির ভিতর প্রবেশ না করে অন্ননালির ভিতর প্রবেশ করে।

রাসায়নিক পরিপাকঃ

শর্করা পরিপাক: লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে টায়ালিন ও মল্টেজ নামে শর্করাবিশ্লেষী এনজাইম পাওয়া যায়। এগুলো জটিল শর্করাকে মল্টোজ এবং সামান্য মল্টোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে। টায়ালিনের ক্রিয়া মুখগহ্বরে শুরু হলেও এর পরিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয় পাকস্থলিতে।

                           টায়ালিন                                             মল্টেজ                  

জটিল শর্করা                                          মল্টোজ                                           গ্লুকোজ

আমিষ পরিপাক: মুখগহ্বরের লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে কোন প্রোটিওলাইটিক এনজাইম না থাকায় এখানে আমিষ জাতীয় খাদ্যের কোন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটেনা।

স্নেহ পরিপাক: মুখগহ্বরে স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য কোন এনজাইম না থাকায় এধরনের খাদ্যের পরিপাক ঘটেনা।

লালামিশ্রিত, চর্বিত ও আংশিক পরিপাককৃত শর্করা গলবিল ও অন্ননালির মাধ্যমে পাকস্থলিতে পৌছায়।

Share:

বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

মানব পরিপাকতন্ত্র আলোচনা পর্ব-১

মানবদেহের বিভিন্ন জৈবনিক কাজ পরিচালনা, শক্তি সরবরাহ, দেহিক ও মানসিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা এবং রোগজীবানুর আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করার প্রাথমিক প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে পুষ্টি। খাদ্য-ই মানবদেহে পুষ্টির যোগান দেয়। তবে মানুষ যেসব খাদ্য গ্রহণ করে থাকে তার অধিকাংশই দেহকোষের প্রোটোপ্লাজন শোষন করতে পারেনা। শরীরের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন এনজাইমের তৎপরতায় খাদ্য পরিপাক নামে এক বিশেষ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিপাক হতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রথমে সরল দ্রবনীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার পরে শরীরে প্রবেশের উপযোগী হয়। সবশেষে রক্ত এ পরিপাককৃত খাদ্যকে শরীরের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে।



পরিপাকঃ

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জটিল খাদ্যবস্তু বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে ও এনজাইমের সহায়তায় দ্রবণীয় সরল ও তরল এবং দেহকোষের গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে তাকে পরিপাক (Digestion) বলে। যে তন্ত্রের সাহায্যে খাদ্যবস্তুর পরিপাক ও শোষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে পৌষ্টিকতন্ত্র বলে।

পরিপাক প্রক্রিয়া কতগুলো ধারাবাহিক যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

যান্ত্রিক পরিপাক: পরিপাকের সময় যে প্রক্রিয়ায় গৃহীত খাদ্যের পরিশোষিত অংশ চিবানো, গলাধঃকরণ ও পৌষ্টিকনালি অতিক্রমের সময় নালির বিভিন্ন অংশেল পেশল সঞ্চালনের ফলে খাদ্য ভাঙনের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত হয়ে এবং এনজাইমের ক্রিয়াতলের বৃদ্ধি পেয়ে সহজ ও সম্ভব করে তোলে তাকে যান্ত্রিক পরিপাক বলে।

রাসায়নিক পরিপাক: পরিপাকের সময় গৃহীত খাদ্যের পরিপাকযোগ্য অংশ পরিপাকের পরপরই মুখ, পাকস্থলি ও অন্ত্রে এসিড, ক্ষার ও এনজাইমের সহায়তায় রাসায়নিক ভাঙনের মাধ্যমে দেহকোষের গ্রহণোপযোগী উপাদানে পরিনত হওয়াকে রাসায়নিক পরিপাক বলে।

মানবদেহের পৌষ্টিকতন্ত্র পৌষ্টিকনালি এবং সংশ্লিষ্ট পৌষ্টিকগ্রন্থি নিয়ে গঠিত।

পৌষ্টিকতন্ত্র

 

 

 

পৌষ্টিকনালি

১. মুখছিদ্র

২. মুখগহ্বর

৩. গলবিল

৪. অন্ননালি

৫. পাকস্থলি

  ক. কার্ডিয়া

  খ. ফানডাস

  গ. বড় বাঁক

  ঘ. পাইলোরাস

  ঙ. ছোট বাঁক

৬. ক্ষুদ্রান্ত্র

  ক. ডিওডেনাম

  খ. জেজুনাম

  গ. ইলিয়াম

৭. বৃহদন্ত্র

  ক. সিকাম

  খ. কোলন

1)      উর্ধ্বমুখী

2)      অনুপ্রস্থ

3)      নিম্নমুখী

4)      সিগময়েড

 গ. মলাশয়

৮. পায়ু

 

 

পৌষ্টিকগ্রন্থি

১. লালাগ্রন্থি

২. যকৃত

৩. অগ্ন্যাশয়

৪. গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি

৫. আন্ত্রিকগ্রন্থি

 

 

 

মানুষের পৌষ্টিকনালিতে বিভিন্ন ধরনের জটিল খাদ্যের পরিপাক নিম্নোক্ত ৬টি ধাপে সম্পন্ন হয়।

১. খাদ্য ও পানি গলাধঃকরণ

২. খাদ্যের যান্ত্রিক পরিপাক

৩. খাদ্যের রাসায়নিক পরিপাক

৪. পৌষ্টিকনালিতে খাদ্যের সঞ্চালন

৫. পরিপাককৃত খাদ্য ও পানি পরিশোষণ

৬. বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন

মানুষ সর্বভুক প্রাণী। উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উভয় ধরনের খাদ্যই এরা গ্রহণ করে থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় ছয়টি খাদ্য উপাদানই রয়েছে। তবে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য জটিল হওয়ার কারনে এগুলো পরিপাকের প্রয়োজন হয়। বাকি তিনটে খাদ্যোপাদান, যেমন- ভিটামিন, খনিজ লবন ও পানি কোষে সরাসরি গৃহীত হওয়ায় এগুলো পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। সঠিক পরিপাণ শর্করা, আমিষ, স্নেহদ্রব্য, ভিটামিন, খনিজ লবন ও পানি দিয়ে গঠিত যে খাদ্র কোনো ব্যক্তির স্বাভাবিক পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে তাকে সুষম খাদ্য বলে। নিচে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষের সুষম খাদ্যের তালিকা প্রদান করা হলো।

খাদ্য উপাদান

পরিমাণ

প্রধান কাজ

১. শর্করা (Carbohydrate)

৪১৫-৬০০ গ্রাম

তাপশক্তি উৎপাদন ও দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি।

২. আমিষ (Protein)

১০০-১৫০ গ্রাম

দেহের বৃদ্ধি, কোষগঠন, ক্ষয়পূরণ, এনজাইম ও হরমোন উৎপাদন।

৩. স্নেহদ্রব্য (Lipid)

৫০-৫৫ গ্রাম

তাপশক্তি উৎপাদন ও দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ।

৪. ভিটামিন (Vitamin)

৫৫০০-৫৬০০ মিলিগ্রাম

পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করা এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।

৫. খনিজ লবণ (Mineral salts)

৮-১০ গ্রাম

স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা।

৬. পানি (Water)

২-৩ লিটার

প্রোটোপ্লাজমকে সিক্ত ও সজীব রাখ এবং কোষের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।


 


Share:

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হোমিওপ্যাথি কি, ইহা কিভাবে কাজ করে?

হোমিওপ্যাথি হল নিরাপদ, মৃদু এবং নিরাময়ের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা যা রোগীর লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দিতে, রোগীকে পুনরুদ্ধার করতে এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে রোগীর দেহের সাথে কাজ করে।

এতে কোন রোগের চিকিৎসা করা হয় না, রোগীর চিকিৎসা করা হয়। রোগ একটি নাম যা আমরা কিছু টেস্টের মাধ্যমে যান্ত্রিক উপায়ে নির্ণয় করা হয়। অপরদিকে রোগী বলতে বুঝায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে প্রাপ্ত সকল লক্ষণ। হোমিওপ্যাথিতে শুধু রোগের চিকিৎসা করা হয় না রোগী হতে প্রাপ্ত সকল লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, কোন ব্যক্তির জ্বর হয়েছে উক্ত জ্বরে রোগীর দেহে প্রাপ্ত লক্ষণ সমূহ হিসেবে রোগীর গায়ের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অস্থিরতা, পিপাসা, গাত্র বেদনা দেখা যায়। এক্ষেত্রে রোগের নাম হিসেবে চিকিৎসা করলে জ্বরের চিকিৎসা করা হবে এবং দেহের তাপমাত্রা নিরসণের চেষ্টা করা হবে কিন্তু রোগীর দেহে প্রাপ্ত অন্যান্য লক্ষণ সমূহকে প্রাধান্য দেয়া হবে না। এ দিকে তাপমাত্রা নিরসন হতে গিয়ে দেখা গেল রোগীর মাথা ঘোরা ও দূর্বলতা দেখা যায় যা রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ না করে বরং আরো অন্য লক্ষণের সৃষ্টি করলো।



কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে রোগীকে চিকিৎসা করা হয় রোগীর প্রাপ্ত সকল লক্ষনের উপর ভিত্তি করে। উপরে যে লক্ষণ সমূহের কথা বলা হয়েছে সকল লক্ষণের উপর ভিত্তি করে রোগীকে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এমন ঔষধ নির্বাচন করবেন যে ঔষধের রোগীর দেহে প্রাপ্ত লক্ষণ পুনরায় সৃষ্টি করতে পারে। ঔষধ নির্বাচনের পর ঔষধের শক্তি নির্বাচন করবেন যা রোগীর প্রাপ্ত লক্ষণের চেয়ে মৃদু নয় এবং খুব বেশী শক্তিশালী হয় তাও নয়। শক্তি হতে হবে প্রাপ্ত লক্ষণের তুলনায় সামান্য বেশী। শক্তি মৃদু হলে তা রোগীর লক্ষণ দ্বারা পরাজিত হবে আবার অধিক শক্তিশালী হলে রোগীর জীবনীশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা রোগীর রোগ লক্ষণকে আরো বৃদ্ধি করবে। এখন ঔষধ প্রয়োগের পর ঔষধ রোগীর দেহে প্রবেশ করে পূর্বে সৃষ্ট সমলক্ষণ সমূহ পুনরায় তৈরী করে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট লক্ষণ সমূহ থেকে ঔষধ দ্বারা সৃষ্ট লক্ষণ সমূহ কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় ঔষধ দ্বারা সৃষ্ট লক্ষণ সমূহ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট লক্ষণের স্থান দখল করে কিন্তু তখনও রোগী আরোগ্য লাভ করে নাই রোগীর দেহে সকল লক্ষনই দেখা যায়, তখন রোগীর দেহের লক্ষণ সমূহ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে যা বুঝতে হবে ঔষধের সৃষ্ট লক্ষণ সমূহ এ সময় অন্য কোন ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে না। ঔষধের ক্রিয়াকাল শেষ হওয়ায় সাথে সাথে রোগীর দেহের লক্ষণ সমূহও দুরীভূত হতে থাকবে। ফলে রোগী আরোগ্য লাভ করবে।

এতে দেখা যায় রোগীর অন্য কোন অতিরিক্ত লক্ষণের সৃষ্টি হয় নাই এবং ঔষধের ক্রিয়াকাল কম হওয়ায় রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করছে।

তাই হোমিওপ্যাথিকে সমধর্মী চিকিৎসা ব্যবস্থাও বলা হয়ে থাকে।

Share:

Clock

Facebook Page