বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

মানব পরিপাকতন্ত্র আলোচনা পর্ব-১

মানবদেহের বিভিন্ন জৈবনিক কাজ পরিচালনা, শক্তি সরবরাহ, দেহিক ও মানসিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা এবং রোগজীবানুর আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করার প্রাথমিক প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে পুষ্টি। খাদ্য-ই মানবদেহে পুষ্টির যোগান দেয়। তবে মানুষ যেসব খাদ্য গ্রহণ করে থাকে তার অধিকাংশই দেহকোষের প্রোটোপ্লাজন শোষন করতে পারেনা। শরীরের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন এনজাইমের তৎপরতায় খাদ্য পরিপাক নামে এক বিশেষ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিপাক হতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রথমে সরল দ্রবনীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার পরে শরীরে প্রবেশের উপযোগী হয়। সবশেষে রক্ত এ পরিপাককৃত খাদ্যকে শরীরের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে।



পরিপাকঃ

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জটিল খাদ্যবস্তু বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে ও এনজাইমের সহায়তায় দ্রবণীয় সরল ও তরল এবং দেহকোষের গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে তাকে পরিপাক (Digestion) বলে। যে তন্ত্রের সাহায্যে খাদ্যবস্তুর পরিপাক ও শোষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে পৌষ্টিকতন্ত্র বলে।

পরিপাক প্রক্রিয়া কতগুলো ধারাবাহিক যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

যান্ত্রিক পরিপাক: পরিপাকের সময় যে প্রক্রিয়ায় গৃহীত খাদ্যের পরিশোষিত অংশ চিবানো, গলাধঃকরণ ও পৌষ্টিকনালি অতিক্রমের সময় নালির বিভিন্ন অংশেল পেশল সঞ্চালনের ফলে খাদ্য ভাঙনের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত হয়ে এবং এনজাইমের ক্রিয়াতলের বৃদ্ধি পেয়ে সহজ ও সম্ভব করে তোলে তাকে যান্ত্রিক পরিপাক বলে।

রাসায়নিক পরিপাক: পরিপাকের সময় গৃহীত খাদ্যের পরিপাকযোগ্য অংশ পরিপাকের পরপরই মুখ, পাকস্থলি ও অন্ত্রে এসিড, ক্ষার ও এনজাইমের সহায়তায় রাসায়নিক ভাঙনের মাধ্যমে দেহকোষের গ্রহণোপযোগী উপাদানে পরিনত হওয়াকে রাসায়নিক পরিপাক বলে।

মানবদেহের পৌষ্টিকতন্ত্র পৌষ্টিকনালি এবং সংশ্লিষ্ট পৌষ্টিকগ্রন্থি নিয়ে গঠিত।

পৌষ্টিকতন্ত্র

 

 

 

পৌষ্টিকনালি

১. মুখছিদ্র

২. মুখগহ্বর

৩. গলবিল

৪. অন্ননালি

৫. পাকস্থলি

  ক. কার্ডিয়া

  খ. ফানডাস

  গ. বড় বাঁক

  ঘ. পাইলোরাস

  ঙ. ছোট বাঁক

৬. ক্ষুদ্রান্ত্র

  ক. ডিওডেনাম

  খ. জেজুনাম

  গ. ইলিয়াম

৭. বৃহদন্ত্র

  ক. সিকাম

  খ. কোলন

1)      উর্ধ্বমুখী

2)      অনুপ্রস্থ

3)      নিম্নমুখী

4)      সিগময়েড

 গ. মলাশয়

৮. পায়ু

 

 

পৌষ্টিকগ্রন্থি

১. লালাগ্রন্থি

২. যকৃত

৩. অগ্ন্যাশয়

৪. গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি

৫. আন্ত্রিকগ্রন্থি

 

 

 

মানুষের পৌষ্টিকনালিতে বিভিন্ন ধরনের জটিল খাদ্যের পরিপাক নিম্নোক্ত ৬টি ধাপে সম্পন্ন হয়।

১. খাদ্য ও পানি গলাধঃকরণ

২. খাদ্যের যান্ত্রিক পরিপাক

৩. খাদ্যের রাসায়নিক পরিপাক

৪. পৌষ্টিকনালিতে খাদ্যের সঞ্চালন

৫. পরিপাককৃত খাদ্য ও পানি পরিশোষণ

৬. বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন

মানুষ সর্বভুক প্রাণী। উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উভয় ধরনের খাদ্যই এরা গ্রহণ করে থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় ছয়টি খাদ্য উপাদানই রয়েছে। তবে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য জটিল হওয়ার কারনে এগুলো পরিপাকের প্রয়োজন হয়। বাকি তিনটে খাদ্যোপাদান, যেমন- ভিটামিন, খনিজ লবন ও পানি কোষে সরাসরি গৃহীত হওয়ায় এগুলো পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। সঠিক পরিপাণ শর্করা, আমিষ, স্নেহদ্রব্য, ভিটামিন, খনিজ লবন ও পানি দিয়ে গঠিত যে খাদ্র কোনো ব্যক্তির স্বাভাবিক পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে তাকে সুষম খাদ্য বলে। নিচে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষের সুষম খাদ্যের তালিকা প্রদান করা হলো।

খাদ্য উপাদান

পরিমাণ

প্রধান কাজ

১. শর্করা (Carbohydrate)

৪১৫-৬০০ গ্রাম

তাপশক্তি উৎপাদন ও দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি।

২. আমিষ (Protein)

১০০-১৫০ গ্রাম

দেহের বৃদ্ধি, কোষগঠন, ক্ষয়পূরণ, এনজাইম ও হরমোন উৎপাদন।

৩. স্নেহদ্রব্য (Lipid)

৫০-৫৫ গ্রাম

তাপশক্তি উৎপাদন ও দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ।

৪. ভিটামিন (Vitamin)

৫৫০০-৫৬০০ মিলিগ্রাম

পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করা এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।

৫. খনিজ লবণ (Mineral salts)

৮-১০ গ্রাম

স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা।

৬. পানি (Water)

২-৩ লিটার

প্রোটোপ্লাজমকে সিক্ত ও সজীব রাখ এবং কোষের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।


 


Share:

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Clock

Facebook Page