সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

মানব পরিপাকতন্ত্র আলোচনা পর্ব-৩।। পাকস্থলিতে খাদ্য পরিপাক (Degestion of Food in Stomach)

পাকস্থলিতে খাদ্য পরিপাক (Degestion of Food in Stomach)

পাকস্থলিটি ডায়াফ্রামের নিচে উদরের উপরের অংশে অবস্থিত প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১৫ সেন্টিমিটির প্রস্থে বাঁকানো থলির মতো অংশ। একে কয়েকটি অংশে ভাগে করা যায়, যথা-

১. যে অংশে অন্ননালি উন্মুক্ত হয় তা কার্ডিয়া।

২. কার্ডিয়ার বাম পাশে পাকস্থলি প্রাচীল যা গম্বুজাকার ধারণ করে তা ফানডাস।

৩. ডান অবতল ও বাম উত্তল কিনারা যথাক্রমে ছোট ও বড় বাঁক।

৪. যে অংশটি ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়েছে তা পাইলোরাস নামে পরিচিত।

কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক অংশে একটি করে বৃত্তাকার পেশিবলয় আছে। বলয়দুটিকে যথাক্রমে কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক স্ফিংক্টার বলে।



যান্ত্রিক পরিপাক:

·        মুখ থেকে চর্বিত খাদ্য অন্ননালিপথে পাকস্থলিতে এসে ২-৬ ঘন্টাকাল অবস্থান করে।

·        এসময় প্যারাইটাল কোষ থেকে HCl ক্ষরিত হয়ে খাদ্য বাহিত অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়।

·        মসৃণ পেশির ৩টি স্তর নিয়ে পাকস্থলি গঠিত। পেশিস্তর বিভিন্ন দিকমুখি হওয়ায় পাকস্থলি প্রাচীর নানাদিকে সঞ্চালিত হয়ে মুখগহ্বর থেকে আসা অর্ধচূর্ণ খাদ্যকে পেস্ট-এ পরিণত করে।

·        এসময় গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরিত হয়ে পাকস্থলির যান্ত্রিক চাপে পিস্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশে ঘন মিশ্রণে পরিণত হয়। খাদ্যের এ অবস্থা কাইম বা মন্ড নামে পরিচিত। এর উপর গ্যাস্টিক গ্রন্থি নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক কাজ শুরু হয়ে যায়।

রাসায়নিক পরিপাক:

পাকস্থলির প্রাচীর পেশিবহুল এবং গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি সমৃদ্ধ। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি এক ধরনের নলাকার এবং চার ধরনের কোষে গঠিত। প্রত্যেক ধরনের কোষের ক্ষরণ আলাদা। সম্মিলিতভাবে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির ক্ষরনকে গ্যাস্ট্রিক জুস বলে। এর ৯৯.৪৫% ই পানি। গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন এই জুস ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

শর্করা পরিপাক: পাকস্থলি থেকে শর্করাবিশ্লেষী কোন এনজাইম নিঃসৃত হয় না। ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোন পরিবর্তন ঘটে না।

আমিষ পরিপাক: গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রোটিওলাইটিক নামক এনজাইম থাকে। এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের Hcl এর সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে পেপসিন ও রেনিন নামক সক্রিয় এনজাইমে পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিওজ ও পেপটোন এ পরিণত করে। রেনিন দুগ্ধ আমিষ কেসিনকে প্যারাকেসিনে পরিণত করে।

স্নেহ পরিপাক: পাকস্থলির প্রাচীর থেকে গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়। এটি প্রশমিত স্নেহদ্রব্যকে ফ্যাটি এসিড ও ‍গ্লিসারল এ পরিনত করে।

অর্ধপাচিত এ খাদ্য ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। পাকস্থলির পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংক্টার পেশির বেড়ী যা ছিদ্রপথকে বেষ্টন করে থাকে পাকস্থলি থেকে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
Share:

0 Comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Clock

Facebook Page