রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০

বিয়ের আগে হবু বর ও কনের ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করা কি অত্যন্ত জরুরী?


অনেক হবু স্বামী -স্ত্রীকে দেখা যায় ব্লাড গ্রুপ নিয়ে চিন্তিত হতে। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা বর ও কনের ব্লাড গ্রুপ মিলে গেলে হতে পারে নানান রকম সমস্যা? আসলেই কি তাই? না, ধারণাটি একদম ভুল। ব্লাড গ্রুপ মিলে গেলে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রীর উভয়ের ব্লাড গ্রুপ যদি Positive অথবা Negative হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই শুধু স্বামীর রক্তের গ্রপ যদি Positive হয় এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রপ যদি Negative হয় সমস্যা শুধু সেইখানেই। আবার স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ যদি Positive হয় এবং স্বামীর Negative হয় তাহলেও কোন সমস্যা নেই। তবে বিয়ের আগে বর ও কনের ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। কেন এটা এত জরুরী? নিম্নের বিষয় গুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন।

ব্লাড গ্রুপ পজিটিভ অথবা নেগেটিভ কেন হয়? 

  রক্তে যদি Rh factor নামে একটি ফ্যাক্টর থাকে যাহা এক প্রকার Protein, এটি রক্তের red cell এর surface এ অবস্থান করে। Rh factor বা Rhesus factor যাহা Rhesus নামক এক প্রজাতীর বানরের রক্তের কমন factor. ইহা যদি রক্তে উপস্থিত থাকে তবে রক্ত হবে +ve (positive), আর যদি Rh factor উপস্থিত না থাকে তাহলে রক্ত হয় Negative (-ve).

ব্লাড গ্রুপের প্রকারভেদঃ 

 রক্তের প্রধান গ্রুপ ২টি যথা – ‘A’ ও ‘B’ সর্বমোট গ্রুপ গুলো নিম্নরুপঃ A +ve, A -ve, B +ve, B -ve, AB +ve, AB –ve, O +ve, O –ve

Rh factor বা রক্তের গ্রুপ negative বা positive কি ভাবে সৃষ্টি হয়? 

যদি পিতা-মাতার যে কোন একজনের রক্তে Rh factor থাকে তবে সন্তানের রক্তে Rh factor +ve (positive) অথবা Rh factor –ve (Negative) হতে পারে। অর্থাৎ বাবা মায়ের যে কোন একজনের রক্তের গ্রুপ positive হলে সন্তানের রক্তের গ্রুপ positive অথবা Negative হবে। কিন্তু পিতা-মাতার উভয়ের রক্তের গ্রুপ যদি positive হয় তবে সন্তানের রক্তের গ্রুপ হবে positive আবার পিতা-মাতার উভয়ের রক্তের গ্রুপ যদি Negative হয় তবে সন্তানের রক্তের গ্রুপ হবে Negative এটি একটি inherited case বা Genetic ব্যাপার।

Rh factor এর উপস্থিতি বা রক্তের গ্রুপ Positive অথবা Negative হলে কি হয়? 

 মায়ের রক্তের গ্রুপ যদি Negative হয় এবং ভ্রুনের রক্তের গ্রুপ যদি Positive হয় সে ক্ষেত্রে মায়ের রক্তের সঙ্গে সন্তানের রক্তের একটি Miss matching হয় medical term এ যাকে Rh incompatibility বলে। এ ক্ষেত্রে ১ম সন্তানের বেলায় তেমন কোন সমস্যা হয়না তবে পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভকালিন সময়ে ভ্রুনের রক্ত এবং মায়ের রক্ত বিনিময় হয়না কিন্তু গর্ভাবস্থার শেষের দিকে যে কোন এক সময় অথবা প্রসব কালীন সময়ে সামান্য কিছু রক্ত ভ্রুণ দেহ থেকে গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের দেহে স্থানান্তর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মায়ের রক্ত ও ভ্রুণের রক্ত মিশে গিয়ে ভ্রুণের Rh factor মায়ের দেহে Rh immunoglobulin নামক Antibody তৈরী করে।আর পরবর্তীতে গর্ভকালীন সময়ে সমস্যার সৃষ্টি করে এই Rh Immunoglobulin antibody.
এই antibody পরবর্তী গর্ভ কালীন সময়ে Rh +ve ভ্রুণের দেহে প্রবেশ করে তার লোহিত রক্ত কনিকা গুলিকে (RBC) আক্রমন করে, মুলত RBC কে ধ্বংশ করে। (agglutination হয়)। এ অবস্থাকে hemolytic anemia বল। পরর্বতীতে hemolytic anemia এর কারণে গর্ভের ভ্রুণ মারা যায়। (Hemoglobin কমে যাওয়ায় ভ্রুণের দেহে Oxygen এর ঘাটতি দেখা দেয়। ভ্রুণ মারা যাওয়ার এটিও একটি কারন।)

সমস্যা সমাধানরে উপায়- 

১.বিবাহ পূর্ব সর্তকতাঃ- Blood group জেনে বিয়ে করা।
২. বিবাহ উত্তর করণীয়ঃ- একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে সন্তান জন্মদানের ব্যবস্থা নেয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সমস্যার সমাধান আছে।
Share:

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কী, কারন ও লক্ষণ।



বেশিরভাগ সময়েই মেয়েরা তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো এড়িয়ে যায় বা কারো সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে ইতস্তত বোধ করে। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন প্রতিটা মেয়েকেই পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এটা অতি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা! তেমনি সাদাস্রাব বা হোয়াইট ডিসচার্জও মেয়েদের জন্য একটি সর্বজনীন বিষয়। প্রতিটা মেয়েরই জানা উচিত যে মাসের কোন সময়ে কেমন ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ থাকতে পারে, এটার স্বাভাবিক রঙ কেমন হয় ও কোন সময়ে তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। চলুন, আজ আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই!



ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কী?

যোনিপথ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে যেই স্রাবটা বের হয়, সেটাই ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ! ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ মেয়েদের প্রজনন পদ্ধতিকে পুনরুৎপাদনশীল করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্লুইড বা মিউকাস বের হয়ে ভ্যাজাইনার মৃত কোষ, অনিষিক্ত ডিম্বাণু ও ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয় এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। ডিসচার্জের মাধ্যমে মেয়েদের রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম বা প্রজননতন্ত্র পরিষ্কার ও সচল থাকে। ভ্যাজাইনায় অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যার পরিমাণ হরমোন ও এসিডের মাত্রা দ্বারা নিজস্ব পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত হয়।

ডিসচার্জ বেশি হওয়ার কারণ

বয়সভেদে মাসিকচক্র অনুযায়ী মেয়েদের ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের পরিমাণ, রং ও টেক্সচার বা ঘনত্ব আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আঠালো, সাদা ও স্বচ্ছ স্রাব যেতে পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিশেষ কিছু সময় ছাড়া অতিরিক্ত ডিসচার্জ অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যহীনতার কারণ হতে পারে। স্রাব বেশি হওয়ার কারণগুলো একনজরে দেখে নিন তাহলে-
১) জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ গ্রহণ
২) শরীরে হরমোন ও পি এইচ ব্যালেন্সের তারতম্য
৩) অপুষ্টি ও পানি ঠিকমতো না খাওয়া
৪) গর্ভাবস্থা ও ডায়াবেটিস

মাসিকচক্রে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ এর রং ও ধরন

প্রত্যেকটি মেয়েরই তার স্রাবের রং ও গন্ধ স্বাভাবিক আছে কি না সেটা নিজে নিজে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সময়ভেদে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের ঘনত্ব বিভিন্ন রকম হতে পারে। এই ডিসচার্জের যেকোনো অস্বাভাবিকতা আপনার অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে। মেন্সট্রুয়াল সাইকেলে কোন সময়ে কেমন স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক, সেটা প্রত্যেকটি সচেতন নারীর জানা প্রয়োজন। চলুন এবার তা জানার চেষ্টা করি-

১) দিন ১-৫

মাসিকচক্রের ১-৫ দিন সাধারণত লাল রঙের ব্লাড যায়, যেটা পিরিয়ডের রক্ত! ঋতুস্রাব হচ্ছে অনিষিক্ত ডিম্বাণু, মিউকাস, ইউটেরাইন টিস্যুর মৃত কোষ ইত্যাদির সংমিশ্রণ। অনেকের ৭ দিন পর্যন্ত পিরিয়ড থাকতে পারে।

২) দিন ৬-১৪

মাসিক শেষ হবার পরপরই ভ্যাজাইনা শুষ্ক অনুভূত হয়। এ সময়ে ওভারিতে ডিম্বাণু তৈরি ও ম্যাচিউর হওয়া শুরু করে। অনেকের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে ঘন, সাদা কিংবা হলদেটে স্রাব যেতে পারে।

৩) দিন ১৪-২৫

এই ফেজকে উর্বর সময় বা fertile window বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ এই সময়ে ডিম্বাণু নিষ্কাশন হয়ে ফেলোপিয়ান টিউবে আসে। তাই এই সময়ে শারীরিক মিলনে সন্তান গর্ভে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ওভাল্যুশনের সময় ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বেশি হতে পারে এবং ডিমের সাদা অংশের মতো পাতলা, পিচ্ছিল ও স্বচ্ছ স্রাব হয়ে থাকে। ওভাল্যুশনের পর যোনি পথ আবার শুষ্ক ফিল হয় কিংবা সামান্য আঠালো ও ঘন স্রাব থাকতে পারে।

৪) দিন ২৫-২৮

পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগের সময়টা সাধারণত ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ থাকে না বললেই চলে! এই সময়ে মেয়েদের প্রজননতন্ত্র পিরিয়ডের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর ডিম্বাণু যদি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে যায়, সেটা জরায়ুতে স্থাপিত হয়। আর সেই সময় হালকা গোলাপি বা বাদামি রঙের ডিসচার্জ যেতে পারে। এটাকে ইমপ্ল্যানটেশন ব্লিডিং (implantation bleeding) বলা হয়।

কোন সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?

স্রাবের কোনো অস্বাভাবিক রঙ ও ধরন খেয়াল করলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ জরায়ুর ইনফেকশন, ক্যানসার এসব রোগের লক্ষণও প্রকাশ পায় ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের মাধ্যমে। তাহলে জেনে নিন কিছু অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ সম্পর্কে!
১) হলুদ স্রাব অস্বাভাবিক, এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা যৌনবাহিত সংক্রমণের একটি চিহ্ন। সাধারণত দুর্গন্ধও পাওয়া যায় এই ধরনের ডিসচার্জে।
২) বাদামী রঙের স্রাব যাদের অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এটি অনেক সময় জরায়ুমুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হয়ে থাকে।
৩) সবুজ স্রাব জীবাণু সংক্রমণের লক্ষণ। যৌনবাহিত ইনফেকশন থাকলেও অনেক সময় সবুজাভ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ যেতে পারে।
৪) ধূসর রঙের স্রাব অস্বাস্থ্যকর এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত একটি উপসর্গ হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে যোনীপথে আরও উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন- অস্বস্তি, চুলকানি ইত্যাদি।
৫) ইস্ট বা ছত্রাক সংক্রমণে পুরু, ঘন এবং সাদা স্রাব নির্গত হয়। মোটামুটিভাবে ৯০ শতাংশ মহিলারা তাদের জীবনের কোন না কোন সময়ে ছত্রাক সংক্রমণের সম্মুখীন হয়।
তাহলে জেনে নিলেন, মাসিকচক্র অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ সম্পর্কে! অস্বাভাবিক রঙের স্রাব ছাড়াও মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া, সময়মতো পিরিয়ড না হওয়া, অতিরিক্ত দুর্গন্ধ এসব কারণেও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যোনিপথের যেকোনো সমস্যা কিংবা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের অস্বাভাবিকতা থাকলে অবশ্যই একজন সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নেয়া উচিত। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।

Share:

মেনোপজ কী, কেন হয় ও এর লক্ষণ


অনেক মহিলাই আছেন, যাদের মেনোপজ এর সময় এগিয়ে আসছে এবং এটা নিয়ে তাদের মধ্যে একটা চাপা আতংক বা দুশ্চিন্তা কাজ করে। অনেকে আবার এটা নিয়ে কুসংস্কারে ভোগেন। এই সময়টা সব মহিলাকেই ফেস করতে হবে, তাই অহেতুক চিন্তা না করে, এই সময় কি কি হতে পারে এবং তার বিপরীতে কী কী করা যেতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে বিষয়টা মোকাবেলা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

মেনোপজ কী? 

মেনোপজ (menopause) কী সেটা নিয়ে একটা ক্লিয়ার ধারণা থাকা দরকার। মেনোপজ মহিলাদের জন্য খুব স্বাভাবিক একটা অবস্থা, যেটা সাধারণত বয়েস চল্লিশ পার হবার পরে সকলেরই হয়ে থাকে। একজন মহিলার স্বাভাবিক সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাওয়া এবং রিপ্রোডাকশন পিরিয়ড সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঠিক আগের সময়টায় যে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনগুলো আসে, সেগুলোকেই মেনোপজের শুরু বলা যায়।

মেনোপজ কেন হয়?

একজন মহিলা সাধারণত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু নিয়ে জন্ম গ্রহন করেন, যেগুলো তার জরায়ুতে সংরক্ষিত থাকে। জরায়ু মহিলাদের শরীরের ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন তৈরি করে, যেটা প্রতিমাসের মাসিক এবং ওভাল্যুশনকে নিয়ন্ত্রন করে। যখন জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, তখনই মেনোপজ হয়।

মেনোপজের ধাপ কয়টি? 

মেনোপজ এর তিনটি ধাপ রয়েছে। যথাক্রমেঃ পেরিমেনোপজমেনোপজ এবং পোষ্ট মেনোপজ। মেনোপজ শুরুর আগের কয়েক বছর সময়কে বলা হয় পেরিমেনোপজ। এইসময় আস্তে আস্তে মেনোপজ এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। অর্থাৎ মেনোপজ শুরুর দুই থেকে তিন বছর আগে থেকেই এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে যায়। আর মেনোপজ হচ্ছে এই প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে এক বছর পর্যন্ত সময়কালকে।
এই সময় যে যে শারীরিক পরিবর্তন সেগুলো নিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। যেটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো ধামাচাপা দিয়ে না রেখে বরং কাছের মানুষ, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

মেনোপজ এর লক্ষণ

১) হট ফ্ল্যাশ

মেনোপজ এর সময় যে জিনিসটা সকলকে খুব ভোগায় তা হলো হট ফ্ল্যাশ (Hot Flash)। বাইরের কোনও উৎস ছাড়াই হঠাৎ করে ভীষণ গরম লাগা। সেটা খুব ঠাণ্ডার দিনেও হতে পারে। এর সময়কাল কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে মিনিট দশেক পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি খেতে পারেন। একটু ঢিলে সুতির কাপড় পড়তে পারেন। এতে হট ফ্ল্যাশ হলেও স্বস্তিতে থাকবেন।

২) চুল পড়া

মেনোপজ এর সময়ে হঠাৎ করে অনেক চুল পড়া শুরু হয়। এতে অনেকে খুব অস্বস্তিতে ভোগেন নিজেদের বাহ্যিক পরিবর্তনে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে চুল পড়াটা স্থায়ী কিছু না। মূলত ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন এর উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে চুল পাতলা হওয়া শুরু হয়। এটা একেবারে থামানো সম্ভব না। তবে স্ট্রেস ফ্রি থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর ডায়েট মেনে চলা, ভিটামিন সাপ্লিমেনট নেয়া ইত্যাদি চুল পড়ার হার অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে।

৩) যৌন মিলনে অনিহা

ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন এর উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে শারীরিকভাবে যৌন মিলনের আগ্রহ অনেকটা কমে যায়। পাশাপাশি ইসট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ায় যোনিপথ অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে থাকে, যে কারণে যৌন মিলন মহিলাদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে ঘরোয়া টোটকা বা এর ওর কথা না শুনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।

৪) মুড সুইং

এসময় শরীরে ইসট্রোজেন হরমোন এর ঘাটতি থাকে বলে সেরেটোনিন এবং ডোপামিন হরমোন এর ইমব্যালান্স দেখা দেয় শরীরে। যে কারণে ঘন ঘন মুড বদলাতে থাকে। এর আরও একটি কারণ হলো এসময়ের অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন। যেমন- ওজন বেড়ে যাওয়া, চুল পড়া, হট ফ্ল্যাশ। এগুলোর কারণেঅনেকেই সারাক্ষণ স্ট্রেস এ ভোগেন যেটা থেকে তুচ্ছ কারণে খিটখিটে মেজাজ দেখা দেয়। তবে নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়ম করে হাঁটা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস ফ্রি থাকতে পারলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

৫) জয়েন্ট পেইন

শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা, বিশেষ করে হাঁটু, কনুই, আঙ্গুল, পিঠ এইসময় থেকে শুরু হতে থাকে। তবে মেনোপজ ছাড়াও কারো যদি আথ্রাইটিসলুপাস এবং বারসাইটিস এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এই ধরনের ব্যথা বেশ খারাপ আকার ধারন করে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো এগুলোর কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ, ওজন নিয়ন্ত্রন এই ব্যথার কিছুটা উপশম করে থাকে।

৬) ওজন বৃদ্ধি

মেনোপজের সময়ে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি একটা অন্যতম সমস্যা। এটার কারণে হাঁটু , কোমর এবং পিঠের ব্যথায় ভোগেন অনেকে। এই সময় যেহেতু ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন হ্রাস পায় শরীরে তাই সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও কমতে থাকে। এই হরমোনের অভাবে ওজন নিয়ন্ত্রন করাও কষ্টকর হয়ে পরে আস্তে আস্তে। এছাড়া বয়সের এই ধাপে এসে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, এসময় ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে চাকরি, পড়াশোনা বা বিয়ের কারণে দূরে চলে যায়। চাকরিজীবীদের পেনশনে চলে যাওয়ার সময় চলে আসে। এসব কারণে মনের অস্থিরতা বাড়ে। তাই চল্লিশের পর থেকেই পরিমিত খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা খুব জরুরি। কেননা, এই ওজন বৃদ্ধির ফলে ডায়াবেটিসউচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৭) অনিদ্রা

মেনোপজ এর সময়ে মহিলাদের আরেকটা সমস্যা হলো ঘুম না হওয়া বা ঘুম হলেও ঘুম থেকে ওঠার পরেও সারাদিন ঘুম ঘুম লাগা বা ক্লান্তি লাগা । অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে আছেন। যার কারণ হট ফ্ল্যাশ বা প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া। আবার এই বয়সে অনেকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্ত চাপ বা অন্য কোন অসুখের কারণে ওষুধ শুরু করেন। এসব ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও অনিদ্রা হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেকে ঘুমের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন, যেটা একেবারেই ঠিক না। শুধু মাত্র ডাক্তারের পরামর্শেই ঘুমের ওষুধ খাবেন। ভালো ঘুম হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ঘুমের সময়, উপযুক্ত ব্যায়াম, ক্যাফেইন গ্রহন কমিয়ে আনা এই কাজগুলো বেশ ভালো কাজ দেয়।
পরিশেষে বলবো, মেনোপজ খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। যেটা একটা বয়সের পরে সব মহিলাদের গ্রহন করতে হবে। এই সময়ে যেহেতু হুট করে শারীরিক একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, সেটা নিয়ে অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন, ডিপ্রেশনে পরে যান। কিন্তু পুরো বিষয়টাকে সহজভাবে গ্রহন করলে এবং পরিবারের কাছের মানুষের সাপোর্ট পেলে পুরো ব্যাপারটাই অনেক সহজ হয়ে যায়। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
Share:

সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিধি সংক্রান্ত নির্দেশনার আলোকে ফেইস মাস্কের যথাযথ ব্যবহার বিধি


১)         কর্মস্থলে সার্বক্ষনিক ফেইস মাস্ক  পরিধান করতে হবে। ব্যবহৃত মাস্ক সার্জিক্যাল বা তিনপরত বিশিষ্ট কাপড়ের তৈরী হতে হবে।
২)         সার্জিক্যাল মাস্ক শুধুমাত্র ০১ (এক) বার ব্যবহারযোগ্য। ব্যবহারের পর তা অবশ্যই ঢাকনাযুক্ত নির্দিষ্ট ঝুড়ি/ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। কাপড়ের তৈরী মাস্ক পুনঃব্যবহার যোগ্য এবং ডিটারজেন্ট/সাবান-পানিতে ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে।
৩)         মাস্ক পরিধানের সময় এমনভাবে পরিধান করতে হবে যেন তা নাকের উপরিভাগ থেকে থুঁতনি/চিবুকের নিম্নাংশ পর্যন্ত আবৃত রাখে এবং কোথাও যেন ফাঁকা জায়গা না থাকে।
৪)         পরিধান এবং খোলার সময় মাস্কের দুই পার্শ্বের ফিতা ধরে আলতোভাবে পরতে/খুলতে হবে যেন কোনক্রমেই মুখমন্ডল, ঘাড়, গলায় স্পর্শ না করে।
৫)         কোন অবস্থাতেই পরিধানকৃত মাস্কের মাঝখানে স্পর্শ করা যাবে না। স্পর্শ লেগে গেলে ব্যবহৃত মাস্ক খুলে ফেলতে হবে এবং হাত সাবান-পানি/স্যানিটাইজার দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
৬)         ফেইস মাস্ক সার্বক্ষণিক যথাস্থানে পরিধান করতে হবে। কোন অবস্থাতেই গলায় ঝুলিয়ে রাখা যাবে না এবং ব্যবহারকালীন অবস্থায় মাস্ক নামিয়ে কথা বলা যাবে না।



Share:

Clock

Facebook Page