শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০

অনিদ্রায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


কফিয়া ক্রুডা – ভবিষ্যতের জন্য মনের মধ্যে সর্বদা নানাপ্রকার চিন্তা ও কল্পনা তজ্জন্য অনিদ্রা। ঘুম যেন কিছুতেই চোখে আসে না। সমস্ত রাত্রি বিছানায় ছটফট করে। হঠাৎ শোক, দুঃখ, উদ্বেগ, আনন্দ তাহার কুফলে পীড়া। কোন চর্মপীড়ায় চুলকানির ফলে অনিদ্রা।
নাক্স ভোমিকা - নাক্স ভোমিকার রোগী প্রায়শই খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে পারেন তবে দুর্দান্ত মানসিক ক্রিয়াকলাপ বা উদ্বেগের সাথে ভোর ৫ টা বা ৪:০০ এ জাগ্রত হয়। জাগ্রত হওয়ার পর আর ঘুম আসে না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে। এই জাতীয় তীব্র অনিদ্রা সাধারণত ওষুধের অত্যধিক ব্যবহার বা অ্যালকোহল, কফি এবং ওয়াইন সহ উত্তেজক দ্বারা বা অতিরিক্ত কাজ বা অতিরিক্ত অধ্যয়নের ফলে হয়। সাধারণ নাক্স ভোমিকার রোগী বিরক্তিকর, সহজেই ক্ষুব্ধ এবং অধৈর্য ধরনের হয়।



ক্যামোমিলা - যাদের ক্যামোমিলার প্রয়োজন হয় তারা সাধারণত বিরক্তিকর, অসম্পূর্ণ অবস্থায় থাকেন। তারা প্রায়শই ব্যথা বা বিরক্তিতে ভোগে। তারা দিনের বেলা ঘুমানোর অদ্ভুত লক্ষণ থাকতে পারে। এই বিরক্তিকরতা প্রায়শই দাঁত উঠা শিশুদের মধ্যে পাওয়া যায়।
ককুলাস - যাদের এই ঔষধের প্রয়োজন তাদের ক্লান্তি থেকে নিদ্রাহীন। অনেকদিন পর্যন্ত রাত্রি জাগিয়া অনিদ্রাবশত কোনও পীড়া বা অনিদ্রা। এটি প্রায়শই রাত্রে দেখা বা অসুস্থ ব্যক্তিদের নার্সিংয়ের সাথে সম্পর্কিত ঘুম হ্রাস থেকে আসে। জেগে ওঠার মাধ্যমে তাদের ঘুম ব্যাহত হতে পারে।
বেলাডোনা – এই ঔষধের রোগীরা নিদ্রাহীন, তবুও ঘুমাতে পারছেন না। তারা প্রায়শই ঘুমের সময় বা ঘুমিয়ে পড়ার সময় হঠাৎ ঝাঁকুনি দেয়। তারা প্রায়শই অস্থির থাকে। তীব্র অসুস্থতা বা জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই জাতীয় নিদ্রাহীন অবস্থা প্রায়শই দেখা যায়।
জেলসিমিয়াম - অনিদ্রার জন্য যাদের এই ঔষধের প্রয়োজন হয় তারা প্রায়শই নিস্তেজ ও নিবিড়, এমনকি কাঁপতে থাকে। তবুও তারা পুরোপুরি ঘুমাতে পারে না। কখনও কখনও তারা ঘুমিয়ে পড়া শুরু করে। অবশেষে যখন ঘুমায় তখন তাদের অস্থির ঘুম বা বোকা, ভারী ঘুম হতে পারে।
ক্যাপসিকাম - যাদের ঘরের অসুস্থতা বা অনুরূপ সংবেদনশীল অবস্থায় থেকে নিদ্রাহীনতায় ভোগে তাদের এই ঔষধটি প্রয়োজন হয়। বিশেষত যদি তাদের লাল গাল থাকে।
স্টেফিসাগ্রিয়া – এই ঔষধের রোগীদের দিনের বেলায় নিদ্রা হয় বেশ। কিন্তু রাত্রিতে অনিদ্রায় ভোগে ও আচ্ছন্নভাব দেখা যায়।
হায়োসিয়েমাস- শিশুদের অনিদ্রা, একটু নিদ্রা আসিলেই শিহরিয়া উঠে, হাত পা কাপিয়া চিৎকার করিয়া কাদে। কোন কোন ব্যক্তি ঘুমাইতে হঠাৎ লাফাইয়া উঠে, অনিদ্রার কোন প্রকৃত কারণ পাওয়া যায় না, আদৌ ঘুম হয় না।
ইগ্নেসিয়া- শোক বা দুঃখ চাপিয়া রাখিবার জন্য পীড়া। মনের কষ্ট কাহাকেও বলে না। অনিদ্রায় অস্থিরতা, মাথায় বোধ হয় যেন কেহ এক পার্শ্ব দিয়া একটি পেরেক ঢুকাইয়া দিয়াছে।

উপরোক্ত ঔষধসমূহ ছাড়াও অন্য ঔষধের প্রয়োজন হতে পারে অতএব লক্ষণ ভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।

বিঃদ্রঃ নিজ উদ্দোগে কোন ঔষধ সেবন করবেন না, নিকটস্থ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি ঔষধ সেবন করুন।

Share:

বুধবার, ৬ মে, ২০২০

ঔষধের শক্তি নির্বাচনের উপায়

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধের শক্তি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হোমিওপ্যাথিকে ‍বিভিন্ন রোগের অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শক্তির ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। প্রথমেই জানা প্রয়োজন হোমিওপ্যাথিক ঔষধের শক্তি সম্পর্কে।
Range of Potency:
1)     Low= Mother tincture (Q) to 12C
2)     Medium= 30C to 200C
3)    High=1M to 50M
4)    Highest= CM, DM, MM.
এখানে M=১০০০, CM= ১ লক্ষ, DM=৫ লক্ষ, MM= ১০ লক্ষ


  •         তরুন পীড়ায় অধিক সাদৃশ্য ঔষধটি নির্বাচন করিয়া সাধারনত ৩০ শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করাই শ্রেয়। যদি রোগের তীব্রতা অধিক হয় তবে নিম্নশক্তির ঔষধ ব্যবহার করা উত্তম আর যদি রোগের তীব্রতা খুব বেশী না হয় তবে মধ্য শক্তির ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  •         কোন চিররোগের রোগীর চিকিৎসা আরম্ভ করিবার সময় যদি দেখা যায় রোগীর তরুন কষ্টকর কিছু লক্ষণ আছে তবে সেক্ষেত্রে রোগীকে প্রথমে স্বল্পকালীন ক্রিয়াশীল ঔষধ নিম্ন বা মধ্য শক্তিতে প্রয়োগ করিয়া প্রথমে কষ্টকর লক্ষণ দূর করিয়া পরবর্তীতে লক্ষণ মোতাবেক চিররোগের গভীরভাবে ক্রিয়াশীল ঔষধ উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করিতে হবে।
  •         চিররোগের চিকিৎসায় যদি অন্যকোন লক্ষণ বা তরুণ কোন কষ্টকর লক্ষণ না থাকে তবে গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ প্রথমেই  উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করিতে হবে। তবে গভীর ক্রিয়াশীল উচ্চ শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করিবার সময় অবশ্যই রোগীর জীবনী শক্তির দিকে খেয়াল রাখিতে হবে। যদি দেখা যায় রোগীর জীবনীশক্তি দূর্বল সেক্ষেত্রে উচ্চশক্তির ঔষধ প্রয়োগ করিলে ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় রোগীর ক্ষতি হতে পারে, এমন অবস্থায় রোগীকে আগে নিম্ন বা মধ্য শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করিয়া জীবনীশক্তি সবল করিয়া পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রোগীকে উচ্চ হতে উচ্চতর শক্তি প্রয়োগ করিতে হবে।
  •        যেখানে কোন চর্মরোগ বা অন্যকোন স্রাব চাপা পড়িয়াছে ইতিহাস পাওয়া যায় সেখানে পুনরায় স্রাব নির্গমণ করিতে হবে অন্যথায় আরোগ্য হওয়ার আশা করা যায় না। এসব ক্ষেত্রে তরুণ অবস্থায় মধ্য শক্তি এবং চিররোগের ক্ষেত্রে উচ্চ শক্তির ঔষধ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  •         তরুণ বা চির যে কোন রোগের বেলায় যদি লক্ষণের বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা যায় তবে এমতাবস্থায় ৩০ বা ২০০ শক্তির উপরে ঔষধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
  •         যেখানে রোগী অতিশয় দূর্বল বা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হইয়াছে সেখানে কোন অবস্থাতেই উচ্চ শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে না। সেখানে নিম্ন বা মধ্য শক্তির ঔষধ ব্যবহার করিতে হবে।
  •         উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কোন রোগের প্রবনতাকে আরোগ্য করিতে হইলে প্রথমেই উচ্চশক্তির ঔষধ প্রয়োগ করিতে হবে।

হোমিওপ্যাথিতে রোগীর চিকিৎসায় ঔষধ নির্বাচন করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত ঔষধের শক্তি নির্বাচন করা। যদি ঔষধ নির্বাচন সঠিক হয় কিন্তু ঔষধের শক্তি নির্বাচন সঠিক না হয় তবে রোগী আরোগ্য লাভ না ও করতে পারে। সুতরাং রোগীকে আরোগ্য লাভ করার জন্য সাদৃশ্য মতে ঔষধ নির্বাচন করা যেমন আবশ্যক তেমনিভাবে নির্বাচিত ঔষধের শক্তির নির্বাচনও সঠিক হওয়া আবশ্যক।
Share:

Clock

Facebook Page