শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখ ক্যান্সার কি? এর লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা।

 সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখ ক্যান্সার

সার্ভিক্স হলো জরায়ুর নিচের দিকের অংশ, যা নারী দেহের যোনি এবং জরায়ুকে সংযুক্ত করে। যখন এই জায়গার কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তখন ব্যাপারটি ক্যান্সারে রূপ নেয়। অনেক সময় ক্যান্সার সার্ভিক্স থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীতে ফুসফুস, যকৃত, মূত্রথলি, যোনি, পায়ুপথেও ছড়িয়ে যেতে থাকে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামক একটি ঘাতক ভাইরাস দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ হলে এই রোগ হতে পারে। নারীর জরায়ু-মুখে একটি মারাত্মক ক্ষতিকর টিউমার হলো জরায়ু-মুখ ক্যান্সার। সংক্রমণ হবার পর জরায়ুমুখে ক্যান্সার হতে প্রায় ১০-২০ বছর সময় লাগে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন নারী মারা যাচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে। জরায়ু মুখের ক্যান্সারের মূল অসুবিধাটি হলো এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়। এর আগপর্যন্ত এর লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে মনে করেন। ক্যান্সার যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে যায়, তখন রোগটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়।

 যারা ঝুঁকিতে আছেন: 

১। ১৬ বছর বয়স হওয়ার আগেই যৌনসংগমের অভিজ্ঞতা থাকলে কিংবা পিরিয়ড শুরুর ১ বছরের মধ্যেই যৌন সঙ্গম শুরু করে থাকলে।

২। স্বামী বা যৌন সঙ্গীর শরীরে ভাইরাসটি থাকলে।

৩। অনেকজন যৌনসঙ্গী থেকে থাকলে।

৪। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন, বিশেষত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বড়ি সেবন করে থাকলে।

৫। ধূমপানের অভ্যাস আছে যাদের।

৬। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে।

৭। যৌনসংগমের মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো রোগ থেকে থাকলে। যেমন–এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ইত্যাদি।


 

লক্ষণসমূহ:

 ১। যৌনসংগমের সময় ব্যথার অনুভূতি।

২। অস্বাভাবিকভাবে যোনিদেশ থেকে রক্তপাত হলে। যেমন–যৌনসংগম পরবর্তী সময়ে, দুটি পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে, পিরিয়ড বা রজঃস্রাব বন্ধ হবার পরে।

৩। যোনিদেশ থেকে অস্বাভাবিকভাবে কোনো পদার্থ বের হতে থাকলে।

 ক্যান্সার ছড়িয়ে যেতে থাকলে যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়–

 ১। শ্রোণিদেশে ব্যথা।

২। প্রস্রাবে সমস্যা।

৩। পা ফুলে যেতে থাকা।

৪। কিডনি ফেইলিউর।

৫। হাড়ে ব্যথা হওয়া।

৬। ওজন কমতে থাকা এবং ক্ষুধামান্দ্য।

৭। দুর্বলতা অনুভব করা।

 চিকিৎসার ধরন

এলোপ্যাথিক মতেঃ

সাধারনত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু অপারেশন করে কেটে ফেলা হয়, ফলে একজন নারী মা হওয়ার ক্ষমতা হারাতে পাবেন।

যদি রোগ বেশি ছড়িয়ে পরে, তাহলে কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি দেওয়া হয়। কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা।

 হোমিওপ্যাথিক মতেঃ

সার্ভিক্যাল ক্যান্সার/টিউমার বা জরায়ুমুখ ক্যান্সার/টিউমার হলে জরায়ু কেটে না ফেলে হোমিওপ্যাথিক মতে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। তবে হোমিও মতে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন রোগীর সকল লক্ষণ (পূর্বের ও বর্তমান) এবং চিকিৎসকের গভীর অনুসন্ধান। তাই জরায়ু কেটে ফেলার আগে একজন ভালো হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে আপনি হয়তো আপনার একটি অংগহানি হতে রক্ষা পেতে পারেন।


 

Share:

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

ডেঙ্গু সচেতনতা।।

 

ডেঙ্গু সচেতনতা

ডেঙ্গু কি? 

 

 

 


·         ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে

ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয়দিনের (-১৩ ক্ষেত্রে) মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়

এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয় এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে

ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয় তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে

তবে যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে সেটি মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে




·         ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয় শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয় ছাড়া মাথাব্যথা চোখের পেছনে ব্যথা হয় অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে মনে হয় হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে তাই এই জ্বরের আরেক নামব্রেক বোন ফিভার জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায় যাকে বলা হয় স্কিন র‌্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়

·         ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর – Dengue Hemorrhagic Fever

এই অবস্থাটা সবচেয়ে জটিল এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয়ঃ

শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়

এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে

অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম – Dengue Shock Syndrome

ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াভহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো :

                    রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া

                    নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ দ্রুত হওয়া

                        শরীরের হাত-পা অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়

                    প্রস্রাব কমে যায়

                        হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে

                    এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়


  • ডেংগু হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না প্রাইমারি কেয়ার সেন্টার বা আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের চেম্বারে গেলেই চলবে তিনি রক্তের রিপোর্ট, শারীরিক পরীক্ষা, ব্লাড প্রেসার, পালস ইত্যাদি পরীক্ষা করে তবেই সিদ্ধান্ত দেবেন ভর্তি হবেন কি হবেন না৷ নিজে নিজে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হবার জন্য চেষ্টা করবেন না হাসপাতালগুলি এমনিতেই ভারাক্রান্ত সবার হয়ত দরকারও নেই তবু গিয়ে ভর্তি হয়েছে৷                
  • ডেংগুতে প্লেইটলেট শরীরে দেওয়া খুব কমন ট্রেন্ড হলেও আসলে খুব কম ক্ষেত্রেই প্লেইটলেট লাগে দিলেও কাজে লাগে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷ ব্যাপারে ডাক্তারকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন প্রভাবিত করবেন না প্লেইটলেট কমে গেলেই আতংকিত হয়ে প্লেইটলেট দিচ্ছেন না কেন বলে পীড়াপীড়ি করবেন না প্রেসার,পালস, হিমাটোক্রিট বেশি গুরুত্বপূর্ণ
  • ডেংগু শক সিন্ড্রোম খুব জটিল একটি পর্যায় আইসিইউতে ম্যানেজ করা উচিত লিভার, কিডনি,হার্ট, লাংস সব দিকেই সমস্যা হতে পারে সব কিছু পরীক্ষা করে মনিটর করতে হয় হিসেব করে শিরায় ফ্লুইড দিতে হয়৷ তারপরও কেউ কেউ মারা যেতে পারে এটা মাথায় রাখতে হবে৷
  • জ্বর কমে যাওয়ার পরই মূলত ক্রিটিক্যাল ফেইজ শুরু হয় তাই জ্বর কমলেই ভাল হয়ে গেল সব কিছু এটা মনে করবেন না
















Share:

Clock

Facebook Page